Advertisement
E-Paper

মিতার পথেই পায়েলের বিচার চায় পরিবার ও বন্ধুরা

ক্ষোভে ফুঁসছে পাড়া। পথে নেমেছেন বন্ধুরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়। দাবি একটাই— পায়েলের জন্য সুবিচার।‘‘দশমীর দিন খবরের কাগজে মিতা মণ্ডলের ছবিটা দেখে খুব মনে হচ্ছিল তোর কথা। ঠিক পাঁচ দিন আগেই তো বোধনের দিন তো তোকেও তোর শ্বশুরবাড়ির লোকগুলো মেরে ফেলল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০

‘‘দশমীর দিন খবরের কাগজে মিতা মণ্ডলের ছবিটা দেখে খুব মনে হচ্ছিল তোর কথা। ঠিক পাঁচ দিন আগেই তো বোধনের দিন তো তোকেও তোর শ্বশুরবাড়ির লোকগুলো মেরে ফেলল।

ফারাক একটাই, তুই খবরে এলি না...। তোর ছ’মাসের বাচ্চাটা এখনও খুনিদের হাতে। মিতার পাশে হয়তো যাদবপুর দাঁড়াবে, তোর জন্য কি কিছু করা সম্ভব?’’

ধুবুলিয়ার মেয়ে পায়েল পালের মৃত্যুর ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আছড়ে পড়ছে একের পর এক এমনই সব পোস্ট। কোনওটা তাঁর স্কুলের বন্ধুর তো কোনওটা তাঁর ছোটবেলার খেলার সঙ্গীর।

কেউ লিখছেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজো চাই, কিন্তু কেউ কেউ বাড়ির লক্ষ্মীকে চায় না।’’ কেউ আবার লিখছেন, ‘‘বিয়ের পিঁড়ি থেকে মৃতদেহে পরিণত হল আমার কলেজের বন্ধুটা।’’ নরম স্বভাবের হাসিখুশি মেয়েটা এ ভাবে আত্মঘাতী হবে? মেনে নিতে পারছেন না কেউই। এই তো সে দিনও ছবিটা দেখেছিল বন্ধুরা, ছ’মাসের ছোট্ট মেয়েটাকে দু’হাতে আগলে ধরেছিল পায়েল। সে দিন খুশিতে ঝলমল করছিল ওঁর মুখটা।

২০১১ সালে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বাংলায় বিএ পাশ করেন পায়েল। এর পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ। পড়াশোনার পাঠ শেষ করার পরই বিয়ে হয়ে যায় পায়েলের। শ্বশুরবাড়ির অবস্থা স্বচ্ছল। স্বামী একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পদস্থ অফিসার। শাশুড়ি অবসরপ্রাপ্ত নার্স এবং শ্বশুর ছিলেন সরকারি চাকুরে। তথাকথিত ‘শিক্ষিত পরিবারে’ বিয়ের সময় কোনও দাবিদাওয়া রাখা হয়নি। মেয়েকে বিশ ভরি সোনা আর আসবাবপত্র দিয়েছিলেন পায়েলের বাবা-মা।

যদিও সেই তো ফোনগুলো পরে এসেছিল। কখনও তিন লাখ টাকা চেয়ে তো কখনও অন্য কিছু। তবু ভেঙে পড়েনি পায়েল, বরং আগলে ধরেছিল দুধের মেয়েটাকে।

শেষ ফোনটা এল পঞ্চমীতে। ও পারের ভারী গলাটা জানিয়েছিল, পায়েল হাসপাতালে ভর্তি। জীবন-মরণ নাকি।

ছুটে গিয়েছিল পায়েলের মা ও ছোট বোন পূজা। তার পর...? পূজা জানায়, তাঁর জামাইবাবুরা সে দিন জানিয়েছিল, বাড়ির বাথরুমের শাওয়ারের পাইপ থেকে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে দিদি।

আত্মহত্যা! বিশ্বাস করতে পারেনি পায়েলের ছোট বোন পূজা হাজরা। গত দেড়টা বছরে দিদির নামে এমন কত কথাই তো শুনিয়েছে ও বাড়ির লোকগুলো। বিয়েতে বিশ ভরি সোনা দিয়েই কেন হাত গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে? দাবি মতো আরও লাখ তিনেক টাকা দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন? কেন এত তাড়াতাড়ি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লো পায়েল? সে জবাবদিহিও করতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যদি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় পায়েল, তা হলে তার পরিণতিটা যে ভাল হবে না, সে কথাও ঠারে ঠোরে জানিয়ে দিয়েছিল ওরা।

ভাল যে হয়নি, সে-ও তো স্পষ্ট। মেয়ে হওয়ার পর থেকেই অত্যাচারের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়, দাবি পায়েলের দিদি শুভ্রা রায়ের। আর তার পর? পঞ্চমীর সকালে পাড়ার প্যান্ডেলটায় যখন প্লাস্টিকে মোড়া প্রতিমা ঢুকছিল, মাকে নিয়ে ধুবুলিয়া থেকে শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে ছুটেছিল পূজা। এ দিন তিনি বলেন, “ওরা আমার দিদিকে খুন করে আত্মহত্যার গল্প শুনিয়েছে। কেউ দিদিকে শাওয়ারের পাইপে ঝুলতে দেখেনি। আমরা তো শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে দিদির মৃতদেহ দেখতে পেয়েছি।”

একই ঝড় উঠেছে ফেসবুকের পাতাতেও। সকলেরই দাবি একটাই, ‘বিচার চাই’।

তবে এরই পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠছে আরও একটা আর্তি। আবেদনটা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দুধের শিশুটাকে প্রায় বারো দিন ধরে পালিয়ে বেড়ানো সেই মানুষগুলোর কাছে। —‘‘ওই একরত্তি মেয়েটার কোনও ক্ষতি না করবেন না যেন।’’

Payel Pal justice for payel Family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy