বিপন্মুক্ত জাকির।নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালের সামনে ভিড়টা চাক বেঁধে আছে। হাতে হাতে ছোট টব, ঝলমল করছে মরসুমি ফুল। ওঁরা চিকিৎসকদের খোঁজ করছেন। দোতলার গোলাপি বিছানায় হাঁসুয়া গাঁথা ওঁদের ছেলে এখন ঠোঁট নাড়ছে, বলছে, ‘‘জল খাব আম্মু।’’ আর ওঁরা বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবু সাক্ষাৎ মসিহার মতো।’’
ক’দিন পিছিয়ে গেলে, বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের আর একটা ছবি— ট্রলিতে স্বামীর নিথর দেহ, দেখে হতভম্ব স্ত্রী চিকিৎসকের দু’হাত ধরে ঝাঁকিয়ে চলেছেন, ‘‘ফিরিয়ে দাও গো!’’ আর তার জেরেই চিকিৎসক-হেনস্থার অভিযোগ তুলে ইনটার্ন ছাত্রদের হাতে উঠে এল খেটো বাঁশ। পিটুনি খেলেন মৃতের পরিবার।
আরও একটু পিছিয়ে গেলে, ফের উল্টো এক ছবি— চিকিৎসকের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে রোগীর বাড়ির লোক শাসিয়ে চলেছে, ‘‘সুচ ফোটাচ্ছ, কিন্তু রক্ত যেন না বেরোয়!’’
হাসপাতালে চিকিৎসক নিধন কিংবা কিছু চিকিৎসকের ‘অমানবিক’ মুখ— এই দুই বিপরীত মেরুর মাঝে এ দিন ডোমকল হাসপাতাল দেখল একেবারে অন্য এক ছবি।
দুই খুদের ঝগড়া যে রক্তারক্তিতে গড়াবে ভাবেননি কেউই। তার জেরেই হাঁসুয়ার কোপ পড়ল এক জনের শিরদাঁড়ায়। রেফার না করে ডোমকলের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করে বাঁচিয়ে তুলেছেন বছর ছয়েকের ছেলেটিকে। আর তার জেরেই বুধবার টব হাতে গোটা গ্রাম যেন ভেঙে পড়ল হাসপাতালে।
অভিভূত চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এটাই আমদেরর অক্সিজেন।’’ প্রায় পরিকাঠামোহীন ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডিও মুগ্ধ। বলছেন, ‘‘এটাই তো চিকিৎসকদের প্রেরণা।’’ কোনও রাজনৈতিক নেতা নেই, সেচ্ছাসেবী সংগঠন বা ওষুধ ব্যবসায়ীও নন ওঁরা। কেউ ভ্যান চালক কেউ বা দিন মজুর, হাসপাতাল চত্বরে ফল বিক্রেতা থেকে টোটো চালক, এ দিন সন্ধ্যায় হাজির হয়েছিলেন হাসপাতালে সুপারের ঘরের সামনে। টব হাতে দাড়িয়ে চিকিৎসকদের হাতে একে একে তুলে দিয়েছেন সেই ফুল। নিজেদের মধ্য চাঁদা তুলে টব সমেত তাজা ফুল তুলে দিয়ে নুরসাদ আলি বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবু আমরা সাধারণ মানুষ, আপনারা ভগবান। আর ভগবানকে ফুল দিয়ে পুজো করলাম আমরা। কাল আপনারা ঝুঁকি না নিলে ছোট্ট জাকিরের কী হত ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy