Advertisement
E-Paper

কুয়োয় বিপদ, প্রচারে ইমাম

কোথাও পরিত্যক্ত হয়ে শুকনো ডাল আর পচা পাতার স্তূপে জল-হারা। কোথাও বা বাঁশের মাচা ইটের শাসনে চাপা, যেন ইশারা করছে, প্রচ্ছন্ন বিপদের কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫১
কুয়োয়-উঁকি: বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক।

কুয়োয়-উঁকি: বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক।

গ্রামের আনাচ কানাচে তাদের দেখা মেলে এখনও। কখনও নিমতলার ছায়ায় কখনও বা বর্ধিষ্ণু বাড়ির উঠোনে। কোথাও পরিত্যক্ত হয়ে শুকনো ডাল আর পচা পাতার স্তূপে জল-হারা। কোথাও বা বাঁশের মাচা ইটের শাসনে চাপা, যেন ইশারা করছে, প্রচ্ছন্ন বিপদের কথা।

মুর্শিদাবাদের গ্রাম জীবনে, পরিত্যক্ত সেই সব কুয়োয় বেড়াল-ছাগল-মুরগি পতনের গল্প এখনও অনর্গল। কোথাও দড়ি-বালতি ফেলে তাদের তোলার মানবিক এক-আধটা কাহিনিও রয়ে গিয়েছে গ্রামের মুখে মুখে। কিন্তু মানুষ পতন?

তবে, জলঙ্গির দৌলতাবাদের কলাডাঙায় ছাগল উদ্ধারে নেমে দুই ভাইয়ের মারা যাওয়ার ঘটনা যেন নতুন করে একটা অধ্যায় এঁকে দিয়েছে। তাই শুধু দৌলতাবাদ নয়, আশপাশের অন্য গ্রামগুলিতেও এ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, পঞ্চায়েত এমনকী আজান শেষে মসজিদ থেকে মাইকে ইমামের সতর্কবার্তা— পরিত্যক্ত ইদারাগুলি ভরাট করে দিন। মুর্শিদাবাদ ইমাম মোয়াজ্জিম অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাফ্ফর খান বলছেন, ‘‘নানান সামাজিক বিষয়ে আমরা নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মসজিদ থেকে প্রচার করি। কুয়োর ঘটনার পরেও তা করা হচ্ছে।’’

শনিবার দুপুরে, কলাডাঙার সেই স্তব্ধ গ্রামে পা রেখে জানা গেল, আশপাশের গাঁ-গঞ্জে এ নিয়ে সতর্কতা শুরু হয়ে গিয়েছে। গ্রামের আব্দুস সালাম বলছেন, ‘‘পরিত্যক্ত ওই কুয়োগুলোকে এখনও গ্রামে মানুষ অবহেলা করে রেখে দিয়েছে। বিপদ যে ওঁত পেতে রয়েছে, বুঝতেই পারি না আমরা। পারলে এমন কাণ্ড হতই না।’’ গ্রামের প্রবীণ কুদ্দুস মিঞা তাঁর ঝোলা থেকে বের করছেন, দুরন্ত ছাগ-শিশুর কুয়োয় পড়ে যাওয়ার আরও কিছু খুচরো গল্প। কিংবা প্রাণের বেড়াল ছানা পড়ে যাওয়ায় সামাদ মিঞার বাড়িতে তিন দিনের অরন্ধনের কাহিনি। বলছেন, ‘‘এখনও ভাসা ভাসা মনে পড়ে, আমার বোন শাহিনা এক বার এমনই এক জল থাকা পরিত্যক্ত কুয়োতে পড়ে গিয়েছিল। তবে কি জানেন, সে কুয়ো তখন এত গভীর ছিল না। সে বার শাহিনাকে তুলে এনেছিলেন বিল্লাল হোসেন, এখনও মনে আছে।’’

জলঙ্গি নয়, গোটা জেলায় এমন কুয়োর সংখ্যা নেহাত কম নেই। বাড়ির আনাচে কানাচে দেখা মেলে তার। কোনটা ইট দিয়ে ঘেরা আবার কোনওটার পাড়া-ভাঙা। ডোমকলের আব্দুর রসিদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘এখনও অনেক গ্রামে খোঁজ নিলে খান দশেক এমন কুয়ো পাবেনই। যার অধিকাংশই খোলা। দুর্ঘটনা যে ঘটে না, এমন নয়, মহকুমা সদরে সে খবর পৌছয়ই না।’’ কবরের তলায় নিশ্চুপে ঢাকা পড়ে য়ায় সেই সব খবর। কিন্তু মানুষের হুঁশ ফেরে না।

নওদাপাড়ার একটি গ্রামে কান পাতলে শোনা গেল, বছর পনেরো আগে, গ্রামের মোজারুদ্দিন বিশ্বাসের বাড়ির কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল তার মেয়ে খালেদা খাতুন। স্থানীয় মানুষের তৎপরতায় সেই সময়ে বেঁচে গিয়েছিল খালেদা। তার পরে সেই কুয়ো ইট-কাঠ ফেলে বন্ধ করে দেয় গ্রামের মানুষ। যেমন হয়েছে শুক্রবার মুরসেলিমের বাড়ির উঠোনে থাকা কুয়োটি। শুক্রবারের ঘটনার পরে, বাঁশ-ইট দিয়ে পাকাপাকিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই কুয়ো। তবে, প্রশাসনের কাছে দৌলতাবাদের কুয়ো-কাণ্ডের খবর এখনও পৌঁছয়নি। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, সামনের সপ্তাহে এ নিয়ে ব্লককর্তার সঙ্গে আলোচনা করে তবেই প্রচারের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হবে।

Well Jalangi জলঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy