Advertisement
E-Paper

খেয়ে বেরোনোর পরে যুদ্ধজয়ের আনন্দ

ঠিক সেই সময় ফেরিঘাট পেরিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হলেন নিয়াল্লিশপাড়া-গোয়ালজান অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি নাজিমুল শেখ ওরফে নাজু (৩৫)। তাঁর বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মসুরিডাঙায়।

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৯
অঙ্কন: কুনাল বর্মণ

অঙ্কন: কুনাল বর্মণ

নদিয়ার শহরাঞ্চলে অনেক বিয়েবাড়িতে এখন সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা ফাঁক গলে ঢুকতে বদ্ধপরিকর তাঁদের অনেককেই কোনও ভাবে আটকানো সম্ভব নয়। যে ঢোকার সে ঢুকবেই। অনুষ্ঠান বাড়িতে প্রচুর লোকের মধ্যে পুরোপুরি নজরদারি অসম্ভব। ফলে সুখাদ্যসন্ধানী রবাহুতরা আবির্ভূত হন যথাসময়ে এবং খাদ্যের সদ্ব্যবহার করে চলে যান।

তবে আগে যেমন মূলত অল্পবয়সী, স্কুল পড়ুয়া, বিশেষ করে স্কুলের উঁচু ক্লাসের পড়ুয়া বা কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে নিছক মজা করার জন্য নিমন্ত্রণ বাড়িতে খেতে ঢুকে পড়ার একটা চল ছিল সেটা এখন অনেক কম। একাধিক কেটারার সংস্থা জানাচ্ছে, এখন বরং মাঝবয়সী বা প্রবীণ লোক বেশি চোখে পড়ছে যাঁরা বিনা নিমন্ত্রণে খেতে ঢুকে পড়ছেন।

এক কেটারার সংস্থার মালিক অশোক কুন্ডু বলছিলেন, ‘‘এই তো কয়েক দিন আগে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এক প্রবীণ ঢুকে কেক-টেক খেলেন, তার পর সোজা খাওয়ার টেবিলে খেতে বসে পড়লেন। বাড়ির কেউ তাঁকে চিনতে পারলেন না। বয়স্ক মানুষটিকে কিছু বলতেও তাঁরা ইতস্তত করছিলেন। আমাদেরই এক পরিবেশক গিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে চুপ করে ছিলেন সেই প্রবীণ। সে দিন অবশ্য তাঁকে পাত থেকে কেউ উঠিয়ে দেননি। খাওয়া শেষ করে তিনি চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন।’’

স্কুল জীবনে বিনা নিমন্ত্রণে খেয়ে আসার স্মৃতি আছে অনেকেরই মনে আছে। ঘূর্ণির বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত মৃৎশিল্পী সুবীর পাল বলেন, ‘‘আমরাও স্কুল জীবনে এমন অনেক বার করেছি। সে ছিল বিরাট উত্তেজনা আর মজার ব্যাপার। আমাদের এলাকায় এখনও একটি ছেলে আছে যে এলাকার সমস্ত অনুষ্ঠান বাড়ির খোঁজ রাখে আর বিনা
নিমন্ত্রণে খেতে চলে যায়, আমরা ওর নাম দিয়েছি খাইকুরে।’’

একটি অটোমোবাইল সংস্থায় কর্মরত দ্বৈপায়ন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলে পড়ার সময় অনেক বার একটা ফুলের তোড়া নিয়ে কয়েক জন বন্ধু মিলে চলে যেতাম কোনও একটি বিয়েবাড়িতে। এক বার এইরকম ভাবেই আমাদের এক স্যরের ছেলের বিয়েতে চলে গিয়েছি না-জেনে। খেতে বসে দেখি স্যার দাঁড়িয়ে! পড়িমরি করে অর্ধেক খেয়ে পালিয়ে এসেছিলাম। তার পর থেকে আর কখনও কোনও নিমন্ত্রণ বাড়িতে উটকো ঢুকো পড়িনি। তবে এ এক অন্য রকম মজা। যে খেয়েছে সেই জানে।’’

একাদশ শ্রেণির ছাত্র আসিফ মণ্ডল গল্প শোনাচ্ছিল, ‘‘প্রায়ই এই ভাবে খাই। শেষ বিয়ে খেলাম অগ্রহায়ণ মাসে। সন্ধ্যায় কেমিস্ট্রি পড়ে ফিরছি, দেখলাম বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটা লজে কনেযাত্রীরা ঢুকছে। আমি আর বন্ধু রৌনক ঢুকে পড়লাম। বাইরে দাঁড়ানো এক বন্ধুর কাছে জমা রাখলাম সাইকেল আর স্কুল ব্যাগ। ঢুকেই কনেযাত্রীদের তদারকিতে থাকা এক ভদ্রলোককে ‘কেমন আছেন কাকু’ বলে জড়িয়ে ধরতেই তিনিও এক গাল হেসে বললেন, ‘এই তো ভালই বাবা, যাও-যাও উপরে গিয়ে ফুচকা, পকোড়া খাও।’ দিব্যি পেট পুরে মুফতে ভোজ খেলাম!’’

ভয় করল না? যদি ধরা পড়তে? আসিফ হেসে জবাব দিল, ‘‘এটা একটা রোমাঞ্চকর খেলা। অ্যাডভেঞ্চার! খেলায় তো হারজিত আছেই। ধরা পড়তেই পারি। কিন্তু যদি না-পড়ি তা হলে খেয়েদেয়ে গেট থেকে বেরিয়ে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ হয়।’’

Invitation Marriage Ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy