Advertisement
E-Paper

চোলাইয়ের ভাটি ছেড়ে মুনিশ খাটছেন মঞ্জুরা

কী ভাবে তৈরি করতেন চোলাই? মঞ্জু পাহাড়িয়া বলেন “বাবলা গাছের ছাল আর আখের গুড় হলেই হয়ে যায়। কাঁঠালিয়া গ্রামের উপর দিয়েই চলে গিয়েছে কৃষ্ণনগর-করিমপুরের প্রধান সড়ক।

চলছে চোলাই তৈরি। ফাইল চিত্র

চলছে চোলাই তৈরি। ফাইল চিত্র

কার্তিক সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share
Save

কাঁঠালিয়া গ্রাম বদলে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামের ইতিউতি ছড়িয়ে ছিল চোলাইয়ের ভাটি। আদিবাসী-অধ্যুষিত গ্রামে বহু বাসিন্দার দিন গুজরান হত চোলাই তৈরি করে। ছবিটা বদলে গিয়েছে আবগারি দফতরের লাগাতার অভিযান এবং একটি সমাজসেবী সংগঠনের সচেতনতামূলক প্রচারে। একের পর এক ভাটি বন্ধ হয়েছে। চোলাই তৈরি ছেড়ে কারিগরেরা কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ অন্যের জমিতে মুনিশ খাটেন। এক সময়ের চোলাই-কারিগর মঞ্জু, রাজু, রীতারা বলেন, ‘‘আগে সব সময়ে একটা ত্রাস ছিল, এখন জীবনে শান্তি রয়েছে।’’

কী ভাবে তৈরি করতেন চোলাই? মঞ্জু পাহাড়িয়া বলেন “বাবলা গাছের ছাল আর আখের গুড় হলেই হয়ে যায়। কাঁঠালিয়া গ্রামের উপর দিয়েই চলে গিয়েছে কৃষ্ণনগর-করিমপুরের প্রধান সড়ক। রাস্তার দু’পাশে রয়েছে অসংখ্য বাবলা গাছ। চোলাইয়ের জন্য তার ছাল সংগ্রহ করতাম। আর বাজার থেকে কিনতাম আখের গুড়।’’ মঞ্জু জানান, প্রথমে দুই কেজি বাবলা ছাল পরিমাণমতো জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় টানা দু’দিন। তার পর জলটাকে ছেঁকে নিতে হয়। সেই জলে দুই কেজি গুড় মিশিয়ে তিন-চার দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। জলে পচন ধরলে সেই জলটাকে মুখ ঢাকা হাড়িতে দিয়ে আগুনে ফোটাতে হয় এবং সেখান থেকে একটি নল দিয়ে আরেকটি হাঁড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হয়, যাতে প্রথম হাঁড়ির ফুটন্ত বাবলার কষ সমৃদ্ধ গুড়-জলের বাষ্প নল দিয়ে দ্বিতীয় হাঁড়িতে জমা হতে পারে। ওই বাষ্প দ্বিতীয় হাঁড়িতে ফোঁটা ফোঁটা জমা হয়। সেটাই হল চোলাই।”

হঠাৎ আবগারি দফতরের কর্তারা অভিযান চালালে তাঁরা কী ভাবে আত্মগোপন করতেন সেই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন রাজু পাহাড়িয়া। “আবগারির কর্তারা এসে চোলাইয়ের হাঁড়ি ভেঙে দিত। আমরা আশপাশের এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিতাম। কখনও ঝোপঝাড়ে ঢুকে বসে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যদি আগে থেকে জানতে পারতাম এলাকায় পুলিশ ঢুকছে তা হলে চোলাইয়ের হাঁড়ি ঝোপের আড়ালে কিংবা অন্য কোথাও সরিয়ে রাখতাম।” রাজুর কথায়, “অনেক সময় বাড়ি ফিরে দেখতাম হাঁড়ি, উনুন ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে অভিযানকারীরা। তখন খুব কষ্ট হত। বার বার হাঁড়ি কেনার পয়সাও থাকত না অনেক সময়ে।”

আর এক স্থানীয় বাসিন্দা রীতা পাহাড়িয়ার কাছ থেকে জানা গেল অন্য তথ্য। বললেন, “আমরা এখন ভালমন্দ বুঝতে শিখেছি। আগে যখন চোলাই বানাতাম, তখন এলাকার বুড়ো থেকে যুবক—প্রায় সকলেই চোলাইয়ের নেশায় পড়েছিলেন। অল্পবয়সীরাও বাদ যাচ্ছিল না। এখন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে। নেশাকে ঘেন্না করতে শিখেছে। চোলাই বানালে কোনও সম্মান থাকে না। তাই এ সব ছেড়ে দিয়েছি।”

এলাকার বাসিন্দা মামনি পাহাড়িয়াও বলেন “চোলাই খেয়ে স্বামীরা মাতাল হয়ে বাড়িতে অশান্তি করত। এখন চোলাই বন্ধ, অশান্তিও নেই।”

Daily Labour Hooch Factory Hooch

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}