শেয়ালের কামড়ে জখম চন্দনা। তেহট্ট হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
শেয়ালের উৎপাতে সমস্যায় পড়েছেন মহকুমার মানুষজন। কোথাও শেয়ালের কামড়ে আহত হচ্ছেন। আবার, কোথাও আচমকা রাস্তার উপরে চলে আসায় দুর্ঘটনায় আহত বা মৃত্যু হচ্ছে মানুষজনের।
রবিবার সন্ধ্যায় ফের শেয়ালের কামড়ে গুরুতর আহত হন তেহট্টের বেতাই পোস্টঅফিস পাড়ার চন্দনা ঘোষ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওই আহত মহিলা জানিয়েছেন, ঘর থেকে নামতেই কুকুরের মতো কোনও একটা প্রাণী এসে আক্রমণ করে। আতঙ্কিত চন্দনা বলেন, ‘‘ওটা লাফ দিয়ে এসে আমার গলায় কামড়ে ধরে। তার পরে কী হয়েছে, আর কিছু মনে নেই!’’
একের পর এক এমন ঘটনায় শঙ্কিত এলাকার মানুষও। কাজকর্ম ছাড়াও যাঁরা প্রতি দিন ভোরে রাস্তায় হাঁটতে বের হন, তাঁদের মধ্যেও শেয়ালের আক্রমণে পড়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শেয়ালের ভয়ে অনেকেই ভোরের নির্জন রাস্তায় হাঁটা বন্ধ রেখেছেন।
আরও পড়ুন: ষাঁড়ের গায়ে আগুন দিয়ে পলাতক দুই
রাতে মোটরবাইকের সামনে হঠাৎ করে শেয়াল চলে আসায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে পথচলতি গাড়ি। মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন। কিছুদিন আগে এই ভাবেই আহত হন করিমপুরের মৃণাল চক্রবর্তী।
১০ ডিসেম্বর ভোরে শেয়ালের কামড়ে হোগলবাড়িয়ার সুন্দলপুর, রায়নগর এলাকায় ছয় জন গুরুতর জখম হন। সে দিন ভোরে প্রথম ঘটনাটি ঘটে রায়নগর উত্তরপাড়ায়। সেখানে সন্তোষ মণ্ডলের বাড়ির গোয়ালের দু’টি গরুকে একটি শেয়াল কামড়াচ্ছিল। শেয়ালটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করলে তাঁর হাতেই কামড়ে দেয়। ওই দিন সকালেই সুন্দলপুর গ্রামের বুদ্ধদেব মণ্ডল জমি থেকে শাক তুলতে যাওয়ার সময়ে তাঁকেও শেয়াল কামড়ায়। তার কিছুক্ষণ পরে হরেকৃষ্ণপুর কলোনি পাড়ার ৬৫ বছরের এক মহিলা গুরুভবানী মণ্ডলকে রাস্তায় শেয়াল আক্রমণ করে, তাঁর মুখ ও শরীরের নানা অংশের মাংস খুবলে খেয়ে নেয়।
করিমপুর নেচার কেয়ার সোসাইটির সদস্য শেখর মণ্ডল জানিয়েছেন, শীতকাল আর্থাৎ মূলত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস শেয়ালের যৌন মিলনের মরসুম। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে শেয়ালের যাতায়াত অনেক বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘‘রাতের বেলায় রাস্তা পেরোনোর সময় শেয়াল গাড়ির আলোয় কিছু দেখতে পায় না। ফলে, বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। বড় গাড়ির ধাক্কায় শেয়াল মারা যাচ্ছে আর মোটরবাইকের ধাক্কায় আহত হচ্ছেন বাইকআরোহী, পথচারীরা।’’
আরও পড়ুন: দুরন্ত হওয়ায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় শৈশব!
প্রাণী-বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, মাঠে-ঘাটে খাদ্যের অভাবও শেয়ালের লোকালয়ে ঢুকে পড়ার অন্যতম একটি কারণ। আগে তারা মাঠে আখের রস, খরগোশ জাতীয় প্রাণীদের খেত। এখন মাঠে আখের চাষ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে, খরগোশও কম।
তেহট্ট রেঞ্জের বন আধিকারিক অনুকুল রায় বলেন, ‘‘একদিকে হাঁস- মুরগি খেতে শেয়ালের লোকালয়ে ঢুকে পড়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। তা ছাড়া, যৌনমিলনের সময় বলে ওরা কিছুটা খেপে থাকে। তাই এমনটা ঘটছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মানুষকেই সজাগ থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy