শুরু ‘দুয়ারে ডাক্তার’ কর্মসূচি। শুক্রবার গেদেয়। ছবি: প্রণব দেবনাথ
প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ উজিয়ে মাজদিয়ার খারবাগান থেকে গেদে সম্মিলনী হাইস্কুলে ‘দুয়ারে ডাক্তার’ শিবিরে এসেছেন আবুতাহের মালিথা। দীর্ঘ দিন ধরে শিড়াদাঁড়ার সমস্যায় ভুগছেন। শিবিরে কলকাতা থেকে আসা ডাক্তারবাবুদের দেখিয়ে ওষুধ পেলেন। কিন্তু তার পর? এই চিকিৎসকদের কোথায় পাবেন?
একই প্রশ্ন হারিশনগরেরই বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের নিখিল বিশ্বাসের। তাঁর হাত মাঝেমধ্যেই শক্ত হয়ে যায়। নাড়াতে পারেন না। তাঁর প্রশ্ন, “রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি। কিন্তু দু’দিন পর শিবির শেষ হলে তো এই ডাক্তারবাবুরা আর থাকবেন না। এর পর হাতে সমস্যা হলে কী করব? কোথায়, কাকে দেখাব?”
জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করছেন, স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই রোগীদের ‘ফলোআপ’ করবেন। প্রয়োজনে তাঁরা নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের সঙ্গে টেলিফোনে পরামর্শ নেবেন, যাকে ‘টেলিমেডিসিন’ বলা হয়। আর যদি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়? স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, “সে ক্ষেত্রে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল বা কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা হবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলছেন, ‘‘শিবিরে যে রোগ নির্ণয় হবে তার ফলোআপ আমরা জেলায় করব।”
কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, এত লোকের পরবর্তী চিকিৎসার পরিকাঠামো জেলা বা মহকুমা স্তরের হাসপাতালে কোথায় রয়েছে? এত বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই বা কোথায়? এন্ডোক্রিনোলজি, কার্ডিওলজি, নিউরোমোডিসিন বা নিউরোসার্জারির মতো সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগের চিকিৎসক জেলায় পাওয়াই দুষ্কর। তা হলে ফলো আপ হবে কী করে?
জেলা হাসপাতালের কথাই ধরা যাক। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে রয়েছেন জেনারেল মেডিসিনের ৫ জন, শিশু বিশেষজ্ঞ ৭ জন, শল্য বিভাগ-৫, নাক-কান ও গলা বিভাগের ৩ জন, চর্ম রোগের ১ জন চিকিৎসক।
যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ অর্থের ও যোগাযোগের সমস্যার কারণে জেলা সদর বা কলকাতায় গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারেন না। তাঁরা বেশির ভাগ গ্রামীন স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর নির্ভরশীল। ফলে অনেকের রোগ ঠিকমতো নির্ণয় হয় না। হয় না। দুয়ারে ডাক্তার কর্মসূচির মাধ্যমে সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। প্রকৃত রোগ নির্ণয় করা যাবে। এবং তাঁদের একটা নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির আওতায় আনা যাবে। এ বার স্থানীয় বা জেলা স্তরের চিকিৎসকদের মাধ্যমে তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাবে বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাবে। জেলার মুখ্য স্বা্স্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, “এখানকার চিকিৎসকদের করা প্রেসক্রিপশন তো থাকছেই। তার ভিত্তিতে জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে ওই রোগীদের অগ্রাধিকারের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। যাতে তাঁরা দ্রুত পরিষেবা পেতে পারেন।”
কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না তা হল, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনও চিকিৎসকই যদি জেলাস্তরের হাসপাতালে না থাকেন তা হলে পরিষেবাটা দেবেন কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy