Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Jiban Krishna Saha

ফোন ছুড়েছেন নাতি, দাদু ছুড়েছিলেন সোনাদানা! জীবনের সেই পুকুরের নামে লুকিয়ে গুপ্ত ইতিহাস

বিপদ বুঝে দাদু এবং নাতি, উভয় ছুটে গিয়েছেন ওই পুকুরপাড়ে। দাদু সাতকড়ি থেকে নাতি জীবনকৃষ্ণ, ছোড়াছুড়ির ঐতিহ্য এখনও চলছে। যত কাণ্ড এই পুকুর ঘিরে।

People reminds of TMC MLA Jiban Krishna Saha’s pond’s history

স্থানীয়রা বলছেন, একটা দু’টো নয়। সেদিন দু’ পুটলি গয়না পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণের দাদু সাতকড়ি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ
বড়ঞা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:১৭
Share: Save:

কথায় আছে, ‘জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা’। তবে সিবিআই আসতেই পুকুরে দু’-দু’টি মোবাইল ফোন ফেলে দিতে এক মুহূর্ত নেননি জীবন। জীবনকৃষ্ণ ঘোষ। বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনের জীবন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত। বিধায়ক ছেলেকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবা বিশ্বনাথও। তবে বিধায়কের বাড়ির এঁদো পুকুরকে নিয়েও চর্চার শেষ নেই।

জীবনের ওই এঁদো পুকুরকে স্থানীয়েরা ডাকেন ‘সোনাপুকুর’ বলে। কেন? জানতে হলে ফিরতে হবে একটু অতীতে।

ষাটের দশকের প্রথম ভাগ। বাংলার শাসন ক্ষমতায় তখন কংগ্রেস। একটু একটু করে রাজনৈতিক ভিত তৈরি করছে বামপন্থী শক্তি। মুর্শিদাবাদে হারাধন মহন্ত, আব্দুল মিঞা, কালোবরণ ঘোষ প্রমুখের নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে বাম আন্দোলন। অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা সুনীল ঘোষ, অমল রায় তখনও এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। সেই সময় যুব কংগ্রেস নেতা সুনীল ঘোষের ছায়াসঙ্গী ছিলেন সাতকড়ি সাহা। সম্পর্কে তিনি জীবনকৃষ্ণের দাদু। যে বাড়ি থেকে জীবনকৃষ্ণকে পাকড়াও করে নিয়ে গেল সিবিআই, সেই বাড়িই ঘেরাও করেছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। ফসল ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলার জের গড়ায় অনেক দূর। সাতকড়ির আশঙ্কা ছিল ‘লুট’ হয়ে যেতে পারে তাঁর বাড়ি। তাই ‘লুটেরা’দের হাত থেকে বাঁচতে পুকুরে সোনাদানা ছুড়েছিলেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, একটা দু’টো নয়। সেদিন দু’ পুটলি গয়না পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণের দাদু সাতকড়ি।

পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর ওই পুকুরের সব জল ছেঁকে ফেলে দেওয়া গয়না তুলেছিলেন সাতকড়ি। সেই থেকে স্থানীয়দের কাছে ওই পুকুরের পরিচিত হয় ‘সোনাপুকুর’ বলে।

এখন ‘সোনাপুকুর’-এর চার পাশে অবাঞ্ছিত ঝোপঝাড়। জলে শ্যাওলা। জীবনকৃষ্ণের মোবাইল ছুড়ে ফেলার ঘটনায় তাঁর দাদুর স্মৃতি রোমন্থন করছেন স্থানীয়রা। কেউ নিজে সাক্ষী থেকেছেন। কেউ বা বাড়ির প্রবীণ সদস্যের কাছে শুনেছেন ‘সোনা ফেলা’ দিনের গল্প। গত চার দিন ধরে বড়ঞার বিধায়কের পুকুর ঘিরে যা হল, তা নিয়ে স্থানীয়দের মুখে মুখে ফিরছে সাতকড়ির কাহিনি।

জীবনকৃষ্ণের বাড়ির উত্তর প্রান্তের পেল্লায় পাঁচিল টপাকলেই ঝোপঝাড় এবং বাঁশবাগান। তার মাঝে এই পুকুরটি। গভীরতা মেরে কেটে ফুট দশেক। তবে সিবিআই তল্লাশির দৌলতে ওই পুকুরের ‘গভীরতা’ বেড়েছে বৈকি।

জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তেল ডুমা গ্রাম। এই গ্রামে থাকতেন দাপুটে কমিউনিস্ট নেতা কালোবরণ ঘোষ। তার সঙ্গে দীর্ঘ ২৮ বছর ছায়ার মতো কাটিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনের যে পুকুরে সিবিআই হন্যে হয়ে মোবাইল খুঁজল, ষাটের দশকে ওই পুকুর থেকেই সোনা উদ্ধার করেছিলেন তৎকালীন আরএসপি নেতা কালোবরন ঘোষ। ওঁর মুখেই এই সব গল্প শোনা।’’ এলাকার অশীতিপর বাসিন্দা সুবল কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা সবাই তখন সাতকড়ির দরজার সামনে। আমাদের ভাগ না দিয়ে জমির ফসল কেটেছে সাতকড়ি। গ্রামবাসীরা সবাই রাগে ফুঁসছে। এমন সময় দেখলাম সাতকড়ি এজবেস্টারের চাল পেরিয়ে পুকুরের দিকে এসে দুমদাম ছুড়ে ফেলল তিন-চারটে বোঁচকা। আমরাও ছুটলাম সেদিকে। গিয়ে দেখি জলে ডুবে গেছে বোঁচকা। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমরা অবশ্য কিছু পাইনি। পরে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ কমলে জল ছেঁকে সেই পুকুর থেকে সোনা তুলেছিলেন সাতকড়ি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ পুকুর ওদের জন্য বরাবরই লক্ষ্মী। যত বার বিপদে পড়েছে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’’ এ সব শুনে স্থানীয় এক যুবকের উক্তি, ‘‘দাদুর বিপদে তো ‘ত্রাতা’ হয়েছিল পুকুর, নাতির বেলা আর হল কই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jiban Krishna Saha TMC MLA pond
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE