কামালপুরে সুটরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির ব্যাঙ্কে ডাকাতির তদন্তে নেমে ম্যানেজার ও চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে দিনভর জেরা করল পুলিশ।
রবিবার বিকেলে ডাকাতির পরেই সমবায়ের শাখা ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ঘোষ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শঙ্কু সরকারকে জেরা করা শুরু হয়। এত নিঃশব্দে গোটা ঘটনা ঘটেছে, সেটাই সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
সমবায়ের ম্যানেজার তন্ময় বসু বলেন, “সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা ছিল। ডাকাতেরা পুরোটাই নিয়ে গিয়েছে। তদন্তের জন্য এ দিন সমবায় বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ তিনি জানান, যে গ্রাহকদের টাকার খুব প্রয়োজন, তাঁরা সমবায়ের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে টাকা তুলতে পারেন। যাঁরা টাকা রেখেছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন।
চাকদহের তাতলা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান কার্যালয় সুটরায়। আরও একটি শাখা রয়েছে চুয়াডাঙায়। সমবায় সমিতিটির আর্থিক হাল বেশ ভাল। বহু দিন ধরেই তারা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিয়ে আসছে। ব্যবসার বহর বাড়ায় কয়েক বছর আগে কামালপুরে শাখা খোলা হয়। তন্ময় বলেন, ‘‘আমাদের দুই কর্মী এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এমন সন্দেহের কোনও কারণ দেখছি না।’’
কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, কিছু হিসেব তারা মেলাতে পারছে না। বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে কয়েকটি প্রশ্ন। যেমন:
এক) বিকেল ৪টেয় সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৫টার পরে কেন খোলা ছিল? দুই) কাজের প্রয়োজনে সমবায় খোলা রাখতে হলেও, সদর দরজা কেন বন্ধ করা হয়নি? তিন) ব্যাঙ্কের টাকার উপরে ছ’লক্ষ টাকার বিমা রয়েছে। অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি টাকা রাখা ঝুঁকির। তা সত্ত্বেও কেন ২৩ লক্ষ টাকা শাখায় রেখে দেওয়া হয়েছিল? শুক্রবারের আংশিক এবং শনিবারের লেনদেনের পুরো টাকা সদর দফতরে কেন জমা দেওয়া হয়নি? চার) কেউ কেন টের পেল না? পাঁচ) ডাকাতির পরে দুই কর্মী নিজেরাই বাঁধন খুলে ফেললেন কী করে? ডাকাতেরা কি আলগা করেই বাঁধন দিয়ে গিয়েছিল?
নদিয়া জেলায় প্রায় সাড়ে তিনশো কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি রয়েছে। তার মধ্যে আড়াইশো ব্যাঙ্কের মতো আমানত সংগ্রহ ও ঋণদানের কাজ করে। গ্রামের অনেক মানুষ সমবায়েই টাকা রাখেন। সমিতিগুলিতে সেই অর্থে কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। গ্রামের ভিতরে কার্যত প্রহরী-বিহীন অবস্থায় চলে কোটি-কোটি টাকার কারবার। স্বাভাবিক ভাবেই, ডাকাতির এই ঘটনা আমানতকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। ধুবুলিয়ার আনোয়ারা খাতুন বলছেন, ‘‘সারা মাস সংসার চালিয়ে খুব কষ্টে জমানো টাকা সমবায়ে রাখি। এখন তো দেখছি, নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। সমবায় সমিতিতে টাকা রাখতেই ভয় লাগছে।’’
বিমা সংস্থা যদি ছ’লক্ষ টাকা দিয়েও দেয়, বাকি ১৭ লক্ষ টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত সমবায় সমিতি। ওই টাকা কর্মীদেরই দিতে হবে বলে দফতরের এক কর্তার আশঙ্কা। নদিয়া জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘দিনে-দুপুরে সমবায় সমিতিতে ডাকাতি হয়ে গেল, এটা তো খুবই চিন্তার। ওই সমবায় সমিতি নিয়ে পৃথক তদন্তের কথাও ভাবা হচ্ছে। সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা প্রশাসন ও সমিতিগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করব।’’