Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Dacoity in Ranaghat

নদিয়ার এক নেত্রীকেও খুনের বরাত পান কুন্দন? জোড়া ডাকাতিতে ধৃতের মুখে বাহুবলী নেতার নাম

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্টের ২৫ বা ২৭ তারিখ নদিয়ার ওই ‘প্রভাবশালী’ নেত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করেন কুন্দনেরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৬
Share: Save:

রানাঘাটের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির পাশাপাশি, একটি খুনের পরিকল্পনাও ছিল ধৃত কুন্দন সিংহ ওরফে ফাইটারের। মুর্শিদাবাদের এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়ের সূত্রে নদিয়ার এক রাজনৈতিক নেতাকে খুনের সুপারি এসেছিল কুন্দনের হাতে। এই সুপারির মধ্যস্থতা করে দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের এক ‘বাহুবলী’ নেতা। জেরায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বিশেষ কারণে খুনের সেই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতি পরিকল্পনামাফিকই হয়েছিল বলে জেরায় দাবি করেছেন কুন্দন।

গত মঙ্গলবার বেলা প্রায় ৩টে নাগাদ রানাঘাট শহরের মিশন রোডের পাশে থাকা গয়নার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ওই দিনই পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে কুন্দন এক জন। গ্রেফতারির পর তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। রাজ্যের একাধিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কুন্দনই দুর্গাপুরের কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনের মূল চক্রী। পুলিশ সূত্রে খবর, গাঁজা এবং হেরোইনে আসক্ত কুন্দন মূলত নেশার টাকা জোগাড় করতেই ‘শুটার’ হন। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের একটি খুনের ঘটনাতেও তাঁর নাম উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই কুন্দনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, গত ২০ অগস্ট তাঁর কাছে নদিয়ার এক ‘প্রভাবশালী’ নেত্রীকে খুনের সুপারি আসে। যিনি ‘প্রভাবশালী’ নেত্রীকে প্রাণে মারতে চেয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে মুর্শিদাবাদের এক ‘প্রভাবশালী’ নেতার আত্মীয়ের ‘ভাল’ সম্পর্ক। এর পর সেই আত্মীয়ই ব্যারাকপুরের ‘বাহুবলী’র সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। সেই ‘বাহুবলী’ই তাঁকে কুন্দনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তার পরেই তৈরি হয় খুনের ছক। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, ‘‘ধৃতদের নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তথ্যগুলি যাচাই করে দেখার কাজ চলছে।’’

তদন্তকারীদের ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্টের ২৫ বা ২৭ তারিখ নদিয়ার ওই ‘প্রভাবশালী’ নেত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করেন কুন্দনেরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়। জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ হঠাৎ বদলে যাওয়ায় কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলা হয় কুন্দনকে। খুনের পরিকল্পনা স্থগিত হলেও অন্য ‘মডিউল’ নিয়ে ডাকাতির ছক ‘নিখুঁত’ ভাবেই হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কুন্দন গোটা রাজ্যে আট থেকে দশটি মডিউলে কাজ করতেন। রাজ্যের মূলত পশ্চিমাঞ্চলে তাঁর সিন্ডিকেট শুরু হলেও, বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া, কাঁচরাপাড়া, মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা, মালদহের কালিয়াচক এবং নদিয়ার কল্যাণী শিল্পাঞ্চল এলাকায় নতুন মডিউল গড়ে তুলেছিলেন ‘ফাইটার’। তাঁর সিন্ডিকেটে শার্প শুটারের পাশাপাশি, দক্ষ ‘রাইডার’ (বাইকচালক), প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসা করার মতো লোকেদেরও রাখা হত।

পুলিশ সূত্রই জানিয়েছে, কল্যাণীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়তে আসা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রঘুবীর প্রসাদ নামে বছর কুড়ির এক যুবক কুন্দনের সিন্ডিকেটের ‘টেকনিক্যাল’ বা প্রযুক্তি সংক্রান্ত দায়িত্ব সামলাতেন। তাঁর কাজ ছিল মূলত টাওয়ার লোকেশন ট্যাম্পার করে একাধিক জায়গায় ফোনে যোগাযোগ করা। এক সিম ব্যবহার করে কী ভাবে একাধিক নম্বর থেকে হোয়াট্‌সঅ্যাপ কল করা যায়, সেই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল ওই যুবকের। তবে চলতি বছরের ১৬ জুন বিহার পুলিশের হাতে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন রঘুবীরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dacoity in Ranaghat Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE