Advertisement
E-Paper

চুপিপোতা মন মাপে বাসনেই

এ গাঁয়ে কার মন কোন ডালে দোল খায়, নেতারা জানেন। মন যখন ডাল পাল্টায়, তাও ঠাহর হয় স্পষ্ট। হবে না-ই বা কেন? গাঁয়ের নাম চুপিপোতা, লোকে দিব্যি নিয়ম মেনে চুপিচুপি ভোট দেয়, কিন্তু মন যে বাসনে লেখা। চাইলেই পড়ে ফেলা যায়!

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৫
আরএসপির বাসন (বাঁদিকে), সিপিএমের বাসন (মাঝে), তৃণমূলের বাসন (ডানদিকে)। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

আরএসপির বাসন (বাঁদিকে), সিপিএমের বাসন (মাঝে), তৃণমূলের বাসন (ডানদিকে)। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এ গাঁয়ে কার মন কোন ডালে দোল খায়, নেতারা জানেন। মন যখন ডাল পাল্টায়, তাও ঠাহর হয় স্পষ্ট।

হবে না-ই বা কেন?

গাঁয়ের নাম চুপিপোতা, লোকে দিব্যি নিয়ম মেনে চুপিচুপি ভোট দেয়, কিন্তু মন যে বাসনে লেখা। চাইলেই পড়ে ফেলা যায়!

ধুবুলিয়ার এই গাঁয়ে মেরে-কেটে সাড়ে সাতশো পরিবারের বাস। কিন্তু ডেকরেটরের ব্যবসা তেমন জমে না। বিয়ে-শাদি, চাল্লিশায় বিনি পয়সায় বাসন আসে। এক-এক বাড়িতে এক-এক পার্টির বাসন। ডেকচিতে লালে লেখা ‘সিপিএম’ তো বালতিতে নীলে ‘টিএমসি’। লালেই আবার গামলায় দাগানো ‘আরএসপি’। যারা যে দলের লোক, সেই মতো পার্টি অফিস থেকে চলে আসে।

গোল বাদে শুধু বাড়িতে এক-এক মন এক-এক কথা বললে! এই তো, ঠান্ডু শেখ যে বার মারা গেলেন, তাঁর চাল্লিশায় কার বাসন আসবে তা নিয়ে মহা গোলমাল। এক ছেলে তৃণমূল, এক ছেলে আরএসপি। কার বাসন আনা হবে? বিস্তর তর্কাতর্কির পরে ঠিক হয়, ঠান্ডু যেহেতু মেজো ছেলে আহম্মদ শেখের কাছে থাকতেন আর আহম্মদ আরএসপি করেন, অতএব তাদেরই বাসন ঢুকবে হেঁশেলে।

পুরনো লোকেরা জানেন, এক সময়ে চুপিপোতায় প্রায় সমান প্রভাব ছিল সিপিএম ও আরএসপির। কিছুটা ছিল নকশালদেরও। বছর তিরিশেক আগে সিপিএম গাঁয়ের লোকের জন্য বাসন কেনে। পুরনো পার্টি সদস্য রুস্তম আলি শেখ বলেন, “কাছাকাছি কোথাও অনুষ্ঠানের জন্য বাসন ভাড়া পাওয়া যেত না তখন। মোটা টাকা দিয়ে বাসন ভাড়া করার ক্ষমতাও ছিল না সকলের। তাই কেনা হয়েছিল।”

আরএসপি-ই বা পিছিয়ে থাকে কেন? ডেকচি-গামলা, বালতি, হাতা-খুন্তি, মায় মশলা বাটার হামানদিস্তা পর্যন্ত তড়িঘড়ি কিনে ফেলেছিল তারাও। সর্বহারা নকশালেরা হয় রেস্ত জোগাড় করতে পারেনি, অথবা এ সব অমার্কসীয় মোচ্ছবে তাদের মন নেই। তাদের বাসনের বাসনা ছিল না।

কিন্তু রাজ্যে দিনবদলের পরে গ্রামে তৃণমূলের ক্ষমতা বেড়েছে। একটি বুথে পঞ্চায়েত সদস্যও আছে তাদের। ২০০৬ সালে তারাও তাই কিনে ফেলেছে বাসনের সেট। কারও কাছে বাসন চাইলেই হল, নেতারা ভারী খুশি। ভাড়া তো লাগেই না, চাইলে রাঁধুনিও পাঠিয়ে দেন নেতারা।

আসলে ওতেই তো মাথাগুনতি হিসেব হয়ে যায় অনেকটা, কার ডালে ক’টা মন দোল খাচ্ছে। ভোটের হিসেব পুরো না মিললেও কাছাকাছি যায়। চুপিপোতা গাঁয়েই বাড়ি তৃণমূলের সাধনপাড়া ১ অঞ্চল সভাপতি আবু সাহিদ মণ্ডলের। তিনি হাসেন, “কে কোন দিকে ঢলে আছে, তা তো বাসন নেওয়া দেখেই আমরা বুঝে যাই।’’

মনবদলও ফোটে বাসনের গায়ে।

এই তো, বছর পাঁচেক আগে বড় মেয়ের বিয়ের সময়ে নাসির শেখ তৃণমূলের থেকে বাসন নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে ছোট মেয়ের বিয়ের সময়ে কিন্তু নিলেন সিপিএমের। আবার দীর্ঘদিনের সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত শুকু শেখ মাসখানেক আগে ছোট ছেলের বিয়ে দিতে বাসন নিয়েছেন তৃণমূলের থেকে।

লাল নীল সবুজের খেলায় চুক্কি দেওয়াটা চুপিপোতা বোধহয় এখনও শিখে উঠতে পারেনি।

kitchen wares Political parties rituals function CPM RSP TMC Dhubulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy