Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খোলা ঘাটেই শাড়ি বদল, শিকেয় আব্রু

গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে নবদ্বীপ। পূর্বে মায়াপুর। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এই দুই জনপদে পর্যটকের ভিড় বারোমাসই লেগে রয়েছে। বৈশাখের চন্দনযাত্রা থেকে ফাল্গুন চৈত্রে দোল। লাখো লাখো মানুষ প্রতি বছর নবদ্বীপ-মায়াপুরে আসেন।

ভগ্নপ্রায় দশা নবদ্বীপের দেয়ারাপাড়া ঘাটের শৌচাগারের।  নিজস্ব চিত্র

ভগ্নপ্রায় দশা নবদ্বীপের দেয়ারাপাড়া ঘাটের শৌচাগারের। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে নবদ্বীপ। পূর্বে মায়াপুর।

রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এই দুই জনপদে পর্যটকের ভিড় বারোমাসই লেগে রয়েছে। বৈশাখের চন্দনযাত্রা থেকে ফাল্গুন চৈত্রে দোল। লাখো লাখো মানুষ প্রতি বছর নবদ্বীপ-মায়াপুরে আসেন।

আর গৌর দর্শন করতে এসে গঙ্গাস্নান করবেন না, এমনটা আবার হয় নাকি। কিন্তু নবদ্বীপের প্রায় বেশির ভাগ ঘাটেই কোনও শৌচাগার নেই। স্নানের পর পোশাক পরিবর্তন বা পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে বারো মাসে তেরো পার্বণের শহর নবদ্বীপে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা গঙ্গাস্নান করতে এসে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েন। অনেকে অবস্থা দেখে স্নান না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।

বছরের পর বছর এমনটাই চলে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।

ছবিটা প্রায় একই রকম মায়াপুর হুলোরঘাটেও। সেখানে স্নান করার ভিড় না হলেও যে কোনও উৎসব বা ছুটির দিনে আসা হাজার হাজার মানুষের জন্য কোনও শৌচাগার কিংবা পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। একটি ঝাঁ চকচকে শৌচাগার দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, মাঝে কয়েক মাস খোলা ছিল ওই শৌচাগারটি। তার পর ফের বন্ধ হয়ে। এই ভরা পর্যটন-মরশুমেও। তাই স্নান-সহ শৌচকর্মের জন্য পর্যটকের ভরসা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি।

ফলে নির্মল জেলা নদিয়ার প্রধান পর্যটনকেন্দ্র মায়াপুরের অন্যতম প্রবেশপথ হুলোর ঘাটে নদীর ধারে উন্মুক্ত শৌচালয়ে পুরুষদের কোনও মতে একটা ব্যবস্থা বা ‘অব্যবস্থা’ হয়ে গেলেও মহিলারা বিপাকে পড়েন।

প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের’ অধীনে নবদ্বীপের গঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলিতে তৈরি হয়েছিল শৌচাগার-সহ স্নানার্থীদের পোশাক পরিবর্তনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। রাজ্যে এবং স্থানীয় পুরসভায় তখন বাম রাজত্ব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সব শৌচাগার এবং পোশাক পরিবর্তনের ঘরগুলি সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। তার পরেও নবদ্বীপ পুরসভা এবং বিধানসভায় নয় নয় করে বামেরা দেড় দশক কাটিয়েছেন। কিন্তু শৌচাগারগুলির বন্ধ দরজার তালা খোলার কোনও চেষ্টা করেননি। এর পর পালাবদল হয়েছে। নবদ্বীপ বিধানসভা এবং পুরসভার দখল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সে-ও প্রায় দু’দশক হয়ে গেল। কাপড়ের আড়াল গড়ে উন্মুক্ত স্নানের ঘাটে মহিলাদের ভিজে শাড়ি বদলানোর সেই ট্র্যাডিশন চলেই আসছে। উল্টে পঁয়ত্রিশ বছর আগে তৈরি হওয়া সেই সব শৌচাগার এবং পোশাক পরিবর্তনের ঘরগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দরজা-জানলা নেই, আধো আন্ধকার ঘরগুলো এখন নেশাড়ুদের নিশ্চিন্ত আস্তানা।

স্থানীয় বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার বক্তব্য, নবদ্বীপকে ঘিরে বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা চলছে। নবদ্বীপের গঙ্গার ঘাট নিয়ে যে পরিকল্পনা আগামী দিনে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা, তাতে করে শুধু শৌচাগার বা পোশাক বদলের ঘর নয়, গঙ্গার ধারের ছবিটা আমূল বদলে যাবে। গঙ্গার ঘাটকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, ঘাট বরাবর রাস্তা তৈরি, প্রচুর সংখ্যায় শৌচাগার নির্মাণ সবই রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ওই পরিকল্পনায়। ইতিমধ্যেই ফাঁসিতলা ঘাটে স্নানার্থীদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে।

অন্য দিকে, মায়াপুরের বন্ধ শৌচাগার প্রসঙ্গে নবদ্বীপ ব্লকের বাসিন্দা এবং জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ হরিদাস দেবনাথ জানান, কেন ওই শৌচাগার বন্ধ পড়ে রয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাপারটা খোঁজ নিয়ে দ্রুত একটা ব্যবস্থা করছি।’’

x

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Public Toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE