Advertisement
E-Paper

বিলে ডুবে মৃত একমাত্র ছেলে, চেক নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন বৌমা

মানসের স্ত্রী পায়েল ক্ষতিপূরণ হিসেবে পর দিনই পাঁচ লক্ষ টাকার চেক পান। তা নিয়ে কেচুয়াডাঙার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে তিনি মুরুটিয়ারই বালিয়াডাঙায় বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। অথৈ জলে পড়েছে মানসের পরিবার।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

দিনমজুরি করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলেন বাবা। ছেলে স্কুলে চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। সেই স্কুলে যাওয়ার পথেই ভাণ্ডারদহ বিলে বাস পড়ে মৃত্যু হয় মুরুটিয়ার মানস পালের।

মানসের স্ত্রী পায়েল ক্ষতিপূরণ হিসেবে পর দিনই পাঁচ লক্ষ টাকার চেক পান। তা নিয়ে কেচুয়াডাঙার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে তিনি মুরুটিয়ারই বালিয়াডাঙায় বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। অথৈ জলে পড়েছে মানসের পরিবার। বাড়িতে তাঁর বাবা-মা ছাড়াও নব্বই ছোঁয়া ঠাকুর্দা-ঠাকুরমা রয়েছেন। সোমবার তাঁরা সাহায্য চেয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

সদ্য আঠারো পেরনো পায়েলের সঙ্গে মানসের বিয়ে হয়েছিল গত বছর মার্চে। পায়েল তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। মানসদের তুলনায় সচ্ছল পরিবার। স্নাতক হয়ে ২০১০ থেকেই গৃহশিক্ষকতা করে সংসারের হাল ধরেছিলেন মানস। বাবাকে দিনমজুরি করতে দিতেন না। ২০১৩-য় সুতির ফতুল্লাপুর শশিমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বছর ‌তিনেক বাদে বিয়ে। বাড়ির সকলের মনে হয়েছিল, এত দিনে সুখের মুখ বুঝি দেখা গেল!

এক ঝটকায় সব শেষ হয়ে যায় ২৯ জানুয়ারি সকালে। স্কুলে যাবেন বলে সকালে করিমপুর থেকে আসা বাসটায় চেপেছিলেন বছর তিরিশের মানস। দৌলতাবাদে সেটি বালির ঘাট সেতু থেকে পড়ে যায় জলে। ৪৪ জন মৃতের তালিকায় ঢুকে পড়েন মানস। কার্যত জলে পড়ে পরিবারটা।

মানসের বাবা, বছর পঁয়ষট্টির জয়দেব পাল বলেন, “বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবা-মা আছেন। মানসের মা আর আমিও আছি। আমাদের একটুও জমি নেই। ছেলে জোর করে কাজ না ছাড়ানো পর্যন্ত দিনমজুরি করেই সংসার চালিয়েছি। এক মাত্র ছেলে পড়িয়েছি।’’ তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে শুধু চার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

জয়দেবের আক্ষেপ, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে জিনিসপত্র নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল বৌমা।’’ এখন আমরা কী ভাবে বাঁচব?’’ শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, জীবন বিমা এবং স্কুল থেকে প্রাপ্য টাকাও পায়েলই পাবেন। তাই তিনি চলে যাওয়ায় কেচুয়াডাঙার বাড়িতে শোকের পাশাপাশি চেপে বসছে অনিশ্চয়তার আতঙ্ক। মানসের মা মালা বলেন, ‘‘সরকার টাকা দিলেও আর ছেলেকে ফিরে পাব না। কিন্তু টাকা ছাড়া বাঁচবই বা কী করে?’’

এ ঘটনা নতুন নয়। দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গকে ধরতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিক। তাঁর স্ত্রী বিউটি পুলিশে চাকরি পান এবং তার পরে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেন না বলে অভিযোগ।

পায়েলের বাবা প্রদ্যোত পাল জানান, স্বামীকে হারিয়ে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়াতেই তাকে ক’দিনের জন্য বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওকে তো কিছু একটা করে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য আবার পড়তে হবে। তার খরচ সরিয়ে রেখে বাকিটা ওঁদের দেওয়া হবে।’’ পায়েল অসুস্থ থাকায় ফোনে কথা বলতে দিতে চাননি তিনি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, মানসের পরিবারের আর্জি আসেনি। তা পেলে ব্যবস্থা নেবেন।

Poverty elderly couple administrative support করিমপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy