Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ISKCON

Iskcon: দেবতা এই রাতে ভক্তের ‘প্রিয়’

মায়াপুরে অন্যান্য ভোগের সঙ্গে দেওয়া হয় শতছিদ্রা! জন্মদিনের কেক।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ  শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫৩
Share: Save:

তখন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হয়েছে। নিষ্কণ্টক সিংহাসনে আসীন রাজচক্রবর্তী যুধিষ্ঠির! তাঁর বড় বাসনা, যাঁর জন্য এত কিছু সেই সখা কৃষ্ণের জন্মদিন সাড়ম্বরে যাপন করা। কিন্তু যার জন্মদিন তিনি রাজি নন। পঞ্চপাণ্ডবের প্রবল আগ্রহে শেষ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণ অনুমতি দিলেন। সঙ্গে জুড়লেন শর্ত, কী ভাবে তাঁর জন্মোৎসব পালন হবে সে পরিকল্পনা তিনি নিজেই সাজিয়ে দেবেন। ভক্তজনের বিশ্বাস সেই থেকেই নাকি জন্মাষ্টমী পালনের শুরু। আজ সোমবার, জন্মাষ্টমী। মহাকাব্যের মহানায়কের জন্মদিন ঘিরে মথুরা থেকে মায়াপুর, নন্দালয় থেকে নবদ্বীপ উৎসবের সুতোয় বাঁধা পড়েছে। অবতারবাদে বিশ্বাসী এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তমের আকর্ষণ অমোঘ। তিনি মহাকাব্যের নায়ক। অথচ, জন্মাষ্টমী মোটেই তাঁর সেই মহানায়কোচিত ব্যপ্তির পালন নয়। বরং বাৎসল্য রসের অবিরল ধারায় ভিজতে ভিজতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ রাতে বাড়ির আদরের ছোট্ট শিশু হয়ে ঘরে ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। রণকৌশল, রণহিংসা, বীরখ্যাতি, জয়-পরাজয়ের কুরুক্ষেত্র থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়ে দেবতা এ রাতে প্রিয় হয়ে ওঠেন। দেবতাসুলভ সম্ভ্রমের দূরত্বে নয় ভক্তের কাছে তিনি স্নেহ আর প্রেমে ধরা পড়েন। যে পরিকল্পনার রূপকার তিনি স্বয়ং।

মায়াপুরে সত্যিই তখন বৃষ্টিধারার মতো বিগ্রহের উপর ঝরে পড়তে থাকে গোলাপ, জুই, বেলি, কামিনী, চাঁপা ফুলের পাঁপড়ি। কয়েক কুইন্ট্যাল ফুলের পাঁপড়ির নীচে চার ফুটের বিগ্রহ ঢাকা পড়ে যায়। তার আগে ‘মেঘমল্লারে সারা দিনমান’ মন্দিরে মন্দিরে কৃষ্ণকথা, পাঠ, কীর্তন। ভক্তদের ভিড়ে মন্দির প্রাঙ্গণ জনজোয়ার। ইস্কন মন্দিরে জন্মাষ্টমীতে অন্যতম আকর্ষণ ওই পুষ্পবৃষ্টি! অতিমারির জন্য গত বছর এই সময়ে বন্ধ ছিল মন্দির, উৎসব দুরের কথা। এ বার কিন্তু নিয়ম মেনে দূরত্ববিধি বজায় রেখে প্রায় পুরনো মেজাজে জন্মাষ্টমী পালন হচ্ছে মায়াপুরে। দূর থেকে মহাভিষেক-সহ পুষ্পবৃষ্টি দেখার জন্য মূল মন্দিরের বাইরে বসছে জায়েন্ট স্ক্রিন। তবে নবদ্বীপ তুলনায় অনেক সন্তর্পণে পালন করছে উৎসব। এখানে কোনও উৎসবই মহাপ্রভুকে বাদ দিয়ে হয় না। তাই এখানে জন্মাষ্টমীর উৎসব সর্বত্রই শ্রীকৃষ্ণের নয়। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত মহাপ্রভুর বিগ্রহকে শ্রীকৃষ্ণ মনে করে জন্মাষ্টমী পালিত হয় মহাপ্রভু মন্দিরে। একই প্রথা প্রাচীন মায়াপুরের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রম এবং হরিসভা মন্দিরে। সমাজবাড়িতে বৃন্দাবনী ঘরানায় পালিত হয় উৎসব। ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, “অতিমারির পর এ বার ইস্কনের স্থানীয় ভক্ত এবং বহিরাগত মিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার মানুষ সোমবার রাতে উপস্থিত থাকবেন। তবে কাউকেই মূল মন্দিরে থাকতে দেওয়া হবে না। গোটা মন্দিরে এখন একমুখী পথ। ভক্তদের কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।”

ইতিমধ্যে অতিথিশালায় জায়গা নেই। কয়েকশো গাড়িতে ভরে গিয়েছে পার্কিং লট। গোটা ইস্কন সেজেছে আলোকমালায়।

জন্মাষ্টমীর সঙ্গে তালের বড়ার সম্পর্ক গভীর হলেও নবদ্বীপ বা মায়াপুরের জন্মাষ্টমী শুধুমাত্র তালের বড়ায় সীমাবদ্ধ থাকে না। পায়েস, মালপোয়া, ক্ষীর, রাবড়ি নানারকম বিশেষ খাবারে সাজানো হয় জন্মদিনের ভোগের থালা। নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরে এ দিন অভিষেকে তাঁকে দেওয়া হয় ক্ষীরের মালপোয়া। প্রাচীন মায়াপুর জন্মস্থান মন্দিরে আবার তালের বড়ার সঙ্গে দেওয়া হয় তালের ক্ষীর। ঘরের গরুর দুধ থেকে ক্ষীর তৈরি করে তার সঙ্গে তালের গাঢ় মাড়ি মিশিয়ে তৈরি হয় ওই তাল ক্ষীর।

মায়াপুরে অন্যান্য ভোগের সঙ্গে দেওয়া হয় শতছিদ্রা! জন্মদিনের কেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISKCON Janmasthami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE