Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শাড়িতে লেখা মহাকাব্য

এর আগে, ১৯৯৩ সালে রামায়ণের ৪৩টি ঘটনার চিত্ররূপ একটি সিল্কের শাড়িতে জামদানি কাজে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বীরেন।

জামদানিতে ধরা মহাভারত। নিজস্ব চিত্র

জামদানিতে ধরা মহাভারত। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৪
Share: Save:

মহাভারতের গল্প। সূক্ষ্ম হাতের বুনোটে যা মহাকাব্যের পাতা থেকে নেমে এসেছে তাঁতে বোনা শাড়িতে।

‘যা নেই মহাভারতে, তা নেই ভূ-ভারতে’— কথাটা ভীষণ ভাবে মানেন ফুলিয়ার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাক। তাঁতে বোনা জামদানি শাড়ির উপরে সুতোর কাজে ফুটিয়ে তুলবেন গোটা মহাভারতের গল্প, সে ইচ্ছে তাঁর বহু দিনের। শেষ অবধি বছর খানেকের অক্লান্ত পরিশ্রমে দিন কয়েক আগেই সিল্কের শাড়িতে জামদানি কাজে মহাভারতের গল্প ফুটিয়ে তোলার কাজ শেষ করলেন শিল্পী।

এর আগে, ১৯৯৩ সালে রামায়ণের ৪৩টি ঘটনার চিত্ররূপ একটি সিল্কের শাড়িতে জামদানি কাজে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বীরেন। ২০১৭ সালে এই রামায়ণ-চিত্রিত শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ইংল্যান্ডের এক প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফুলিয়াতে শিল্পীর বাড়ির কাছেই কৃত্তিবাসের জন্মস্থান, তারও একটা প্রভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে রামায়ণের গল্প দিয়ে শাড়ি বোনা খুব একটা কঠিন হয়নি।

রামায়ণ যেখানে সাত কাণ্ড, মহাভারত সেখানে ১৮ পর্বের। অনেক বেশি ঘটনাবহুল। অনেক চরিত্রের ভিড়। তাই কাজও রামায়ণের তুলনায় জটিল।

শিল্পী জানালেন, এই বৈশাখের আগের বৈশাখের এক সন্ধ্যায় বাদকুল্লার চিত্রশিল্পী রাজেশ দত্তকে তাঁর মহাভারতের গল্প দিয়ে শাড়ি বানানোর ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন। সেখান থেকেই শুরু।

রাজেশ প্রতি পর্ব থেকে দু’-তিনটি করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নির্বাচন করে এক ফুট থেকে দেড় ফুট মাপের কাগজে মোট ৪২টি উল্টো ছবির স্কেচ তৈরি করেন। শাড়ির পাড়ের প্রথম দৃশ্যের জন্য আঁকেন ব্যাসদেবের কাছে গণেশের মহাভারত লেখার অংশটি। ৪২ ইঞ্চি/৪২ ইঞ্চি মাপের শাড়ির আঁচলের জন্য আঁকা হয় অর্জুনের বিশ্বরূপ দর্শন। এর পর বীরেনের নির্দেশে একটি মাঠা তাঁতে তিন জন শিল্পী একই সঙ্গে বসে শুরু করেন শাড়ি বোনার কাজ।

সাধারণত, একটি তাঁতে এক জন শিল্পী বসেই কাজ করেন। কিন্তু এক জন শিল্পীর পক্ষে এই গোটা মহাভারত পর্বের কাজ শেষ করতে প্রায় দেড় বছর লেগে যাবে বলে তিন জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কাজ করানো হয়। তাঁরা পাশাপাশি বসে বুটি তোলার কাজ করে সাত মাসেই শাড়িটি

শেষ করেন।

শিল্পী জানালেন, শাড়ির গোটা জমিতে ছোট ছোট করে বাংলা, হিন্দি আর ইংরেজি তিন ভাষায় মহাভারত কথাটি লেখা হয়েছে সুতো দিয়ে। তবে সাড়ে পাঁচ মিটারের এই মহার্ঘ বারো হাত শাড়িটি বীরেন বিক্রি করবেন না।

বীরেন বলেন, ‘‘দুটো মহাকাব্য শাড়িতে লেখা হয়ে গেল। ভবিষ্যতে তাঁতের শাড়ির একটা সংগ্রহশালা করতে চলেছি। সেখানে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই এ ধরনের নানা শাড়ি তৈরির কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saree Weaver Mahabharata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE