Advertisement
E-Paper

রেশনে বাড়ন্ত চাল-চিনি, ক্ষিপ্ত গ্রাহক

সকলের জন্য রেশন— গত ২১ জুলাই শহীদ মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রীর ওই ঘোষণার পরে, সাদা আর সবুজ ফর্ম ভর্তি করে রেশনে নাম তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০১:৫৯

আটা রয়েছে তো চাল নেই। চাল থাকলে আবার চিনি বাড়ন্ত।

সকলের জন্য রেশন— গত ২১ জুলাই শহীদ মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রীর ওই ঘোষণার পরে, সাদা আর সবুজ ফর্ম ভর্তি করে রেশনে নাম তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ডিজিটাল কার্ড শিকেয় তুলে খাদ্য দফতরের কর্তারাও ডিলারদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে ভাবেই হোক রেশন দোকান থেকে কেউ যেন শূণ্য হাতে না ফেরেন।

দু’টাকার চাল আর সকলের জন্য রেশন— দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার নেপথ্যে এ’দুটো যে বড় হাতিয়ার, মেনে নিচ্ছেন দলের নেতারাই। কিন্তু সে কথা আর রাখা যাচ্ছে না। কেন?

সর্বভারতীয় ফেয়ারপ্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলছেন, ‘‘কী করে রাখব বলুন তো, রেশন দোকানে মাল আসছে কোথায়! তিন-চার সপ্তাহের বরাদ্দ অনেক ছুটোছুটির পরে মিলছে এক সপ্তাহের।’’ অথচ সকলের জন্য রেশন। তাই পুরনো কার্ড নিয়েও অনেকেই রেশন দোকানে এসে দাবি করছেন চাল-গম-চিনির।

সঙ্গে দোষর হয়েছে সাম্প্রতিক আরও একটি সরকারি ঘোষণা— চাইলে কোনও গ্রাহক, চার সপ্তাহের চাল-চিনি এক সঙ্গে তুলতে পারেন। ফলে অনেকে সে দাবি করেও চাল-চিনি তুলে নিয়ে য়াওয়ার পরে অন্য়েরা আর পাচ্ছেন না। মুর্সিদাবাদের এক ডিলারের কতায়, ‘‘মালই আসছে না, অথচ দাবি চার সপ্তাহের মাল এক সঙ্গে দিতে হবে, গোদেক উপরে বিষ ফোঁড়া!’’

মুর্শিদাবাদ এবং পড়শি জেলা নদিয়ার রেশন দোকান জুড়ে তাই ওই ‘আকালের’ চেহারা।’’

রেশন না পেয়ে বহরমপুরে বিক্ষোভও ছড়িয়েছে। কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলও বেরিয়েছে।

মুর্শিদাবাদ জেলা খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার অবশ্য রেশন দোকানে এমন হা-অন্ন দশার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘‘আটা নিয়ে কোথাও কোথাও প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে চাল, গম সরবরাহে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়।’’ তাঁর দাবি, ডিলারদের জুন মাসের রেশনও সরবরাহ করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ডিলারদের দেওয়া হয়েছে মে মাসের রেশন। তবুও কেন সাধারণ মানুষ চাল-গম পাবেন না? ছবিটা অবশ্য অন্যরকম বলেই জানাচ্ছেন ডিলারদের অধিকাংশই।

বহরমপুর পুরসভার তিনটি রেশন দোকানের ডিলার— বিশ্বনাথ দাস, অমিতাভ গুপ্ত ও অশোক সাহা বলছেন, ‘‘সাধ আর সাধ্য়ের মধ্য়ে বিস্তর দূরত্ব। ওঁরা (খাদ্য দফতর) বলছেন একরকম অথচ ডিলারদের কাছে সেই পরিমাণ চাল-গম-চিনি কোথায়? গত সপ্তাহে চাল ও গম পাইনি। তাই উপভোক্তাদের দিতে পারিনি। চলতি সপ্তাহে চাল মিললেও আটা, বা গম মেলেনি। দেখা নেই চিনিরও।’’ একই কথা বলছেন, রেশন ডিলার ইউনিয়নের নবগ্রাম ব্লক সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘নবগ্রাম ব্লকেও খাদ্য দফতর থেকে গত সপ্তাহে চাল ও গম না পাওয়ায় দিতে পারিনি। চলতি সপ্তাহে চাল মিললেও আটা, বা গম মেলেনি।’’ বহরমপুর ও নবগ্রামই নয়, রেশনদ্রব্য নিয়ে জেলা জুড়েই নানা ধরণের বেনিয়ম চলছে। দাবি রেশন ডিলারদের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র দাসের। তিনি বলেন, ‘‘কোনও সপ্তাহে চাল পাচ্ছি তো, গম পাচ্ছি না। কোন সপ্তাহে চাল-গম কিছুই মিলছে না। আর উপভোক্তরা আমাদের ভুল বুঝছেন। একই অবস্থা জেলা জুড়েই।’’

নদিয়ায় অবশ্য চালের তেমন হাহাকার নেই। বরং সে জেলায় রয়েছে গম-চিনির জন্য হা পিত্যেশ। নদিয়ার বিভিন্ন জনপদেও রেশন ডিলাররা একই ভাবে গ্রাহকদের প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। তবে নদিয়ার খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলছেন, ‘‘গমের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি রয়েছে ঠিকই তবে সে জন্য ডিলার বা সরকার দায়ী নয়, বরং এফসিআই-এর গোডাউন থেকেই তার সরবরাহ নেই।’’ রয়েছে চিনির হাহাকরও। জেলার রেশন ডিলার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘চাল আছে, তবে গমটা একেবারে বেপাত্তা। আর চিনি, সেই ফেব্রুয়ারি থেকে উধাও।’’

Rice Sugar Ration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy