E-Paper

নেই অর্থ, অভাব রয়েছে সরকারি সাহায্যের, গ্রাম বাংলায় হারিয়ে যাচ্ছে পুতুল নাচ

নদিয়ার হাঁসখালি ব্লকের মুড়াগাছা কিংবা রানাঘাট-২ ব্লকের বড়বড়িয়া কলোনি—কয়েক বছর আগেও সেখানে ছিল শতাধিক পুতুল নাচের দল।

সুদেব দাস

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৬
পুতুল নাচের পুতুল। রবিবার ধানতলায়।

পুতুল নাচের পুতুল। রবিবার ধানতলায়। নিজস্ব চিত্র ।

সিনেমার পর্দায় ঝলমলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস পুতুল নাচের ইতিকথার। সমকালীন সমাজ আর মানুষের টানাপড়েনকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই কাহিনী সম্প্রতি নতুন প্রাণ পেয়েছে চলচ্চিত্রে। গত ১ অগস্ট মুক্তি পেয়েছে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি পুতুল নাচের ইতিকথা। দর্শকেরা ভিড় জমাচ্ছেন সিনেমা হলে। সমালোচকেরাও প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন ছবিকে।

কিন্তু গ্রামবাংলার মেলায়, পুতুল নাচের মঞ্চেক ছবিটা কেমন? সেখানে চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। নদিয়ার হাঁসখালি ব্লকের মুড়াগাছা কিংবা রানাঘাট-২ ব্লকের বড়বড়িয়া কলোনি—কয়েক বছর আগেও সেখানে ছিল শতাধিক পুতুল নাচের দল। পুতুল নাচ মানেই ছিল উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। শিল্পীদের অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন, “এক সময় সিনেমা হল ফাঁকা থাকত। অথচ মেলায় পুতুল নাচ দেখতে মানুষের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা থাকত না।” তবে এখন সে সব ইতিহাস। আয়-রোজগার নেই। গ্রাম বাংলার এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নেই সরকারি উদ্যোগও। ফলে একে একে শিল্পীরা পেশা বদলাচ্ছেন। নতুন প্রজন্মও ভাবে না এই শিল্পকে ভর করে পেশা হিসেবে বেছে নিতে। তবুও কয়েজন শিল্পী এখনও আঁকড়ে রয়েছেন গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে। হাজারো কষ্টের মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন লড়াই। ধানতলার বড়বড়িয়া কলোনিতে এখনও উঁকি দিলে দেখা যায় কয়েকটি বাড়ির বারান্দায় রাখা পুতুল নাচের সরঞ্জাম। শিল্পী কানাই হালদার, শচীন বিশ্বাসের কথায়, "বাপ-ঠাকুরদার পেশা এখনও বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনকার প্রজন্ম এতে আর আগ্রহী নয়।" কাঠ আর কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে চরিত্র। একেক পুতুলকে দেওয়া হচ্ছে আলাদা নাম ও সাজসজ্জা। প্রধান শিল্পী ছাড়াও অন্যরা এখনও হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল হাতে আবহসঙ্গীতের রেওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রবীণ শিল্পীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আর কতদিন টিকে থাকবে এই শিল্প?

উৎসব-অনুষ্ঠান থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়ায় এতে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ কম। অর্থও তেমন নেই বলে শিল্পীদের বর্তমান প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এই পেশা থেকে।চলচ্চিত্রে যখন পুতুল নাচের ইতিকথা দর্শক টানছে। তখন সত্যিকারের পুতুল নাচের দলগুলি ঢাকা পড়ছে উদাসীনতার কালো মেঘে। গ্রাম বাংলার মঞ্চে নিভে যাচ্ছে পুতুল নাচের আলো।

শিল্পীরা বলছেন, পুতুল নাচের পথে প্রধান বাধা হল আর্থিক অনিশ্চয়তা, সরকারি সহায়তার অভাব এবং আধুনিক বিনোদনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া দর্শক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ranaghat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy