Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Sandip Ghosh

সন্দীপের নতুন ঠিকানার হদিস বহরমপুরে, ফ্ল্যাটে না এলেও অনলাইনে টাকা মেটাতেন রক্ষণাবেক্ষণের!

বহরমপুরের ওই আবাসনের পাঁচ তলায় রয়েছে সন্দীপের ফ্ল্যাট। আবাসিকদের দাবি, তিনি যখন কর্মসূত্রে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, তখনই ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।

সন্দীপ ঘোষের নতুন সম্পত্তির হদিস।

সন্দীপ ঘোষের নতুন সম্পত্তির হদিস। —নিজস্ব ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮
Share: Save:

ফ্ল্যাটের দরজার বাইরে তালা ঝুলছে। বন্ধ কোলাপসিবল গেটের মধ্যে ঝুলের দাপট। বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার এক আবাসনের ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ ফ্ল্যাটের মালিকের নাম সন্দীপ ঘোষ!

গোরাবাজার এলাকার ‘সবিতা রেসিডেন্সি’ নামে এক আবাসনের পাঁচ তলায় রয়েছে সন্দীপের ওই ফ্ল্যাট। আবাসিকদের দাবি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ যখন কর্মসূত্রে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, তখনই ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে তিনি ক’বার সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে থেকেছেন, তা মনে করতে পারছেন না ওই আবাসনের আবাসিকেরা। তবে অন্য এক আবাসিক দাবি করছেন, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে বদলি হয়ে আসার পর মাত্র এক বারই ওই আবাসনে পা রেখেছিলেন সন্দীপ।

আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্য দাবি করছেন, গত চার বছরের মধ্যে এক বারও ‘ডাক্তারবাবু’কে চোখে দেখেননি। তবে তিনি জানেন ওই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম সন্দীপ। আবাসনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ দাস বলেন, ‘‘গত চার বছর ধরে এই আবাসনে ডাক্তারবাবুকে আসতে দেখিনি। তবে অনেকের মুখ থেকে শুনি, তালাবন্ধ ওই ফ্ল্যাটটি ডাক্তারবাবুর।’’ ওই ফ্ল্যাটে না এলেও সময় মতোই আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মিটিয়ে দিতেন তিনি। আবাসিকদের দাবি, অনলাইনেই রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতেন সন্দীপ। আবাসনের নীচে পার্কিংলটে একটি গ্যারাজও আছে তাঁর নামে। অবশ্য সেই গ্যারাজটি বর্তমানে ইসলামপুরের এক জন ব্যক্তি ভাড়া নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুতের বিলও নাকি অনলাইনেই জমা দিতেন সন্দীপ, এমনই দাবি আবাসিকদের।

ওই আবাসনের এক আবাসিকের দাবি, ‘‘দীর্ঘ দিন সন্দীপকে দেখা যায়নি এই ফ্ল্যাটে। মাঝে দু’-এক দিন অন্য এক জন ওই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। ছিলেন কিছু ক্ষণ। তার পরেই চলে যেতেন।’’ আবাসনের ঠিক সামনের এক দোকানদারের কথায়, “ডাক্তারবাবু যখন নতুন হাসপাতালে ছিলেন, তখন উনি এখানেই থাকতেন। মাঝেমধ্যেই আমার দোকানে আসতেন। বদলি হওয়ার পর থেকে আর কোনও দিন ওঁকে দেখিনি। পরে শুনেছিলাম উনি আরজি করের অধ্যক্ষ হয়েছেন।’’

গোরাবাজারের এই ফ্ল্যাট সন্দীপ কবে, কার থেকে কিনেছিলেন তা নিয়ে অবশ্য আবাসিকেরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৎকালীন সন্দীপ ‘ঘনিষ্ঠ’ এক আবাসিক জানিয়েছেন, শুধু গোরাবাজারে নয়, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ঠিক সামনে— স্বর্ণময়ী এলাকাতেও দু’হাজার বর্গফুটের আরও একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে নাকি সন্দীপের।

উল্লেখ্য, আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সেখানকার তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপকে নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলছে। ওই মামলা বেশ অনেক বার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে হয়েছে। পরে আরজি করের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের মামলায় সন্দীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি। সেই মামলাতেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তদন্ত শুরু করেছে অন্য এক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেই তদন্তের সূত্র ধরেই দিন কয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের একটি বাংলোয় হানা দেয় তারা। জানা যায়, সেই বাংলোটি সন্দীপের। ক্যানিং-২ ব্লকের ঘুটিয়ারি শরিফের নারায়ণপুর মৌজায় কয়েক’শ বিঘা ফাঁকা জমির মাঝেই মাথা তুলেছে ওই সবুজরঙা দোতলা বাংলোটি। বাংলোর উপরে লেখা ‘সঙ্গীতাসন্দীপ ভিলা’। জমির চারপাশে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ক্যানিং ছাড়াও আরও কয়েক জায়গায় সন্দীপের সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে এই ক’দিনে। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল বহরমপুরেই এই ফ্ল্যাটটি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sandip Ghosh R G kar Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE