Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রবীন্দ্রজয়ন্তী ও হালের অ্যানড্রয়েড সংস্কৃতি

প্রেম-প্রকৃতি-বর্ষার যাবতীয় সময়োচিত ধাক্কা হেলায় ঠেলে সম্প্রীতি বিষয়ক যাবতীয় উদ্ধৃতি প্রতিটি মেসেজে (দিন-রাত এক করে সেই কবে থেকে এই আজকের দিনে ঝাড়ার জন্য তৈরি করেছি মশাই, চাট্টিখানি কথা!) উপচে পড়ছে।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ২৩:২৪
Share: Save:

সকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকে রবীন্দ্র-কীর্তনের ছড়াছড়ি দেখে এখন আর কুয়াশার মতো বিস্ময় জমে না। বরং এই খর বৈশাখে অ্যানড্রয়েড উৎসাহীদের হুলুস্থুল কম দেখলে কিঞ্চিৎ অবাক লাগে।

সকালে নেট খুলতেই ‘রবীন্দ্রনাথের নিজের গলায় নিজের লেখা গান’, ‘মান্না-হেমন্ত-সাগর সেনের গলায় রবীন্দ্রনাথ’, এমনকি ‘বাবুল সুপ্রিয়-অরিজিৎ সিংহের গলাতেও রবীন্দ্রসঙ্গীত’ ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছের কাছে শেষতক মোবাইল যখন নতজানু তখনই বেচারা অ-রাবিন্দ্রীক মোবাইল ক্লান্ত হয়ে ঝুলে পড়ে (হ্যাঙ্)!

অতঃপর, প্রেম-প্রকৃতি-বর্ষার যাবতীয় সময়োচিত ধাক্কা হেলায় ঠেলে সম্প্রীতি বিষয়ক যাবতীয় উদ্ধৃতি প্রতিটি মেসেজে (দিন-রাত এক করে সেই কবে থেকে এই আজকের দিনে ঝাড়ার জন্য তৈরি করেছি মশাই, চাট্টিখানি কথা!) উপচে পড়ছে। সঙ্গে রয়েছে আটপৌরে বার্থ ডে কনসার্ন মেসেজও—

শোনো আজ কিন্তু দেরি করবে না। সক্কাল সক্কাল চলে আসবে। আমাকে রবীন্দ্রসদন নিয়ে যেতে হবে। (গাড়ির চালককে কড়া বার্তা পাঠালেন কর্তা)।

সকাল হতে না হতেই টোটো-অটো বা নিজের বাতানুকূল গাড়ির কাচ তুলে পৌঁছে যাওয়া ‘বার্থ-ডে’ অনুষ্ঠানে। ভাগ্যিস কেক কাটার রেওয়াজ চালু হয়নি! তা হলে ‘‘জানি আমি জানি ভেসে যাবে অভিমান...-গেয়ে কেঁদে-কেটে চোখের জলে কেক ভেসে যেত!

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তোতলামো এবং ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয়, চিনি ছাড়া বা কম চিনি দেওয়া লাল বা দুধ চা খাওয়া এবং দামি শাড়ি বা পাট ভাঙা পাঞ্জাবির ভাঁজে-ভাঁজে লেগে থাকা সুগন্ধীর মৌতাত ছড়িয়ে অবশেষে বাড়ি ফেরা রবীন্দ্রপ্রেমীদের।

ফ্ল্যাটের লিফটে উঠতে উঠতে গলায় গুনগুন রবীন্দ্র সুরও আসত বইকি। শোনা যেত—

কোথায় গিয়েছিলেন মশাই! এত সাজুগুজু করে?

আজ পঁচিশে বোশেখ, তাই রবীন্দ্রসদনে গিয়েছিলাম (আত্মতৃপ্তির চোঁয়া ঢেকুর তুলে জবাব)।

সঙ্গে রয়েছে রবীন্দ্রসদনে তার ঠুকে সেলফি তোলার চেনা হিড়িক। বাড়ি ফিরে গুছিয়ে তা আপলোড-তক টানটান উত্তেজনা।

তবু তো, রবীন্দ্রজন্ম-তিথি বছরের আর সব অনুষ্ঠানের মতো একটি পালনীয় দিন। পালন করতে হয়। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই সামনে দাঁড়ানো মানুষটা সংস্কৃতির মানে বুঝতে গিয়ে ক্রমশ একটা আপাত ঘোর লেগে য়ায়, বুঝে না-বুধে। পাশে পড়ে থাকে বাক হারা প্রজ্ঞা। আর কিছু খুচরো শ্লাঘা।

আর তাই, দামি শাড়ির আঁচলের খুঁটে বাঁধা রইল গীতবিতান। রবীন্দ্রসঙ্গীতের মিনি ডিভিডি পাঞ্জাবির পকেটে ঢাকা পড়ে থাকল। ঠাকুর জানতেই পারলেন না রবীন্দ্র অনুরাগীদের লেখায়, অতি কথায়, ফেসবুক তোলপাড় এই বোশেকে কেমন সোরগোল ফেলল।

সব দেখে শুনে পড়ন্ত বিকেলে হারমোনিয়ামের রিড কাঁপানোর আড়ালে পড়ে রইল সেই পেন্সিল, কিছু সদ্য বাঙা পাঞ্জাবির সুঘ্রাণ আর এলো পাথারি খোয়াই সুরের দাপট।

ভাগ্যিস তিনি ফেসবুকে নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Rabindra Jayanti Culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE