Advertisement
E-Paper

জেলা পর্যবেক্ষক আর নন পার্থ, তৃণমূলের রাশ রাজীবের হাতে

ইতিমধ্যেই নদিয়ার সংগঠনকে দুই ভাগে ভেঙে দিয়েছেন নেত্রী। আগের জেলা সভাপতিকে সরিয়ে উত্তর ও দক্ষিণে দুই পৃথক সভাপতিকে বসানো হয়েছে। এ বার রাজীবকে গোটা জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ায় তিনিই কার্যত নদিয়ায় টিম তৃণমূলের ক্যাপ্টেন হতে চলেছেন।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৫:০৭

নদিয়া জেলা সভাপতির পরে এ বার জেলা পর্যবেক্ষককেও সরিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বদলে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হল রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন ও অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

ইতিমধ্যেই নদিয়ার সংগঠনকে দুই ভাগে ভেঙে দিয়েছেন নেত্রী। আগের জেলা সভাপতিকে সরিয়ে উত্তর ও দক্ষিণে দুই পৃথক সভাপতিকে বসানো হয়েছে। এ বার রাজীবকে গোটা জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ায় তিনিই কার্যত নদিয়ায় টিম তৃণমূলের ক্যাপ্টেন হতে চলেছেন।

এই রদবদলে দলের একাংশ যেমন উৎসাহিত, তেমনই হতাশ এত দিন ধরে পার্থের অনুগামী বলে পরিচিত নেতা-বিধায়কেরা। এক সময়ে দীর্ঘদিন তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন মুকুল রায়। ২০১৫ সালে দলের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের পরে কিছু দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দায়িত্ব পালন করেন। তার পরে এই দায়িত্ব নেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৬। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল অপেক্ষাকৃত ভাল ফল করলেও পঞ্চায়েত ভোটে রীতিমতো চাপে পড়ে যায়।

নদিয়ায় বিজেপির উত্থান সেই সময় থেকেই। এক দিকে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ, অন্য দিকে দলীয় প্রার্থীর টিকিট বণ্টন নিয়ে দলের অন্দরে প্রকট গোষ্ঠী কোন্দল। তা ঠেকাতে পারা তো দূরের কথা, রবীন্দ্রভবনে কর্মিসভায় পার্থ প্রকাশ্যেই স্বীকার বলেছিলেন, কোনও-কোনও বিধায়ক তাঁর পছন্দের প্রার্থীকেও টিকিট দেননি। শুধু তা-ই নয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থের আমলেই জেলার কলেজগুলিতে ভর্তি নিয়ে ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি তা-ও বন্ধ করতে পারেননি।

তৃণমূল নেতাদের একটি অংশের দাবি, গোষ্ঠী কোন্দল বন্ধ করা দূরস্থান, বরং পার্থকে ঘিরেই জেলায় তৈরি হয়েছিল একটি গোষ্ঠী। তাঁকে ভাঙিয়ে অনেকেই নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পার্থ সে সব দেখেও দেখেননি বলে দলেরই একাংশের অভিযোগ। তা ছাড়া, একই সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও দলের মহাসচিব হওয়ায় তিনি জেলায় সে ভাবে সময়ও দিতে পারছিলেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা ছাড়া সে ভাবে কেউই তাঁর কাছে ঘেঁষতে পারতেন না। ফলে সমস্যার কথা তাঁকে বলতে পারতেন না অনেকেই। শেষ দিকে তিনি কয়েক জন ঘনিষ্ঠ নেতার মাধ্যমে দল চালাতে শুরু করেছিলেন এবং তা দলনেত্রীর কানেও পৌঁছেছিল বলে নেতাদের একাংশের দাবি। তারই জেরে রানাঘাট কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে, কৃষ্ণনগরে জিতলেও লড়াই শক্ত হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

ফলে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে পার্থের সরে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতাদের একটা বড় একাংশ। দলনেত্রী তাঁকে সরিয়ে এ বার ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীবকে দায়িত্ব দেওয়ায় তাঁরা খুশি। রাজীব বলেন, “রানাঘাটে যা ফল হয়েছে, তাতে কাজটা কঠিন। আমার প্রথম লক্ষ্য হল, দলে গোষ্ঠী কোন্দল থামিয়ে একটা সুতোয় সবাইকে বাঁধা। আর সেই সঙ্গে কর্মীদের চাঙ্গা করা। কাজটা কঠিন হলেও আমি সেটা করেই ছাড়ব।”

পার্থ ব্যর্থ বলেই কি এই বদল? এ দিন বারবার চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে ধরা যায়নি। তবে রাজীব বলেন, “না না, তা কেন? পার্থদা সফল ভাবে কাজ করেছেন। নেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন যে সব বিষয়ে যেন নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই।”

এ দিন কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নদিয়ার দুই নতুন সভাপতি শঙ্কর সিংহ ও মহুয়া মৈত্র। প্রাক্তন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত তো ছিলেনই। গিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও রত্না ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু। কয়েক দিনের মধ্যেই মমতা জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে পর্যবেক্ষক বদল নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ। তিনি শুধু বলেন, “নেত্রী যা ঠিক মনে করেছেন, সেটাই করেছেন।”

Rajib Banerjee TMC Mamata Banerjee Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy