Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ভোটের পরেও সন্ত্রস্ত কল্যাণী

ভোট মিটেছে। সন্ত্রাস কিন্তু চলছেই। নদিয়ার গয়েশপুর-কল্যাণী, হরিণঘাটার মতো এলাকা ভোটের পরেও উত্তপ্ত। খুনোখুনি না হলেও অশান্তির আগুন কিন্তু ধিকিধিকি জ্বলছেই। তৃণমূলের বিরোধিতা করার খেসারত দিতে হচ্ছে জেলার জোট কর্মীদের।

কল্যাণীতে জোটের প্রতিবাদ মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

কল্যাণীতে জোটের প্রতিবাদ মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

ভোট মিটেছে। সন্ত্রাস কিন্তু চলছেই।

নদিয়ার গয়েশপুর-কল্যাণী, হরিণঘাটার মতো এলাকা ভোটের পরেও উত্তপ্ত। খুনোখুনি না হলেও অশান্তির আগুন কিন্তু ধিকিধিকি জ্বলছেই। তৃণমূলের বিরোধিতা করার খেসারত দিতে হচ্ছে জেলার জোট কর্মীদের। কংগ্রেস-সিপিএমের অভিযোগ, ভোটের আগে থেকেই জোটের মাথা তুলে দাঁড়ানো মানতে পারেনি তৃণমূল। কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি শাসানি চলছিলই। তবে সে বাধা উপেক্ষা করেই পাল্টা প্রতিরোধও গড়ে তুলেছিল জোট। আর সেই কারণে ভোটের দিনেও ‘পরিকল্পনা’ মতো ‘অপারেশন’ চালাতে পারেনি তৃণমূল। ফলে ভোট মিটতেই মরিয়া হয়ে সেই ব্যর্থতার বদলা নিতে উঠেপড়ে লেগেছে শাসক দল।

শনিবার রাতে গয়েশপুরের সাঁতরাপাড়ায় বোমাবাজি করে একদল দুষ্কৃতী। সিপিএম সমর্থকদের হুমকি দিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ায় তারা। চুপ করে থাকেননি স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁরা ওই দুষ্কৃতীদের তাড়া করে। পুরুষদের সঙ্গে সামিল হন মহিলারাও। লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করেন তাদের। আচমকা এমন ঘটনায় থতমত খেয়ে এলাকা ছাড়ে ওই দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে কল্যাণী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

ওই রাতে হরিণঘাটাতেও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এক প্রাথমিক শিক্ষকের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মানবেন্দ্র ত্রিবেদী নামে ওই শিক্ষক নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য। ঘটনার পরে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। রবিবার সকালে পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়। ভাঙচুরের ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও রেকর্ডিংও করে তারা। রবিবার সকালে নগরউখড়া বাজারে এক সিপিএম সমর্থকের দোকান জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

জোটের অভিযোগ, ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসিয়েছিল। কিন্তু সেই শাসানি উপেক্ষা করেই বৃহস্পতিবার বুথে গিয়েছিলেন হরিণঘাটা, কল্যাণী, গয়েশপুর এলাকার বাসিন্দারা। আর এখন ভোট মিটে যাওয়ার পরে তারই বদলা নিতে চাইছে তৃণমূল। কল্যাণী মহকুমা জুড়ে একের পর এক হামলার ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার কল্যাণী এ ব্লকে মিছিল করে সিপিএম।

কল্যাণীর জোট প্রার্থী সিপিএমের অলকেশ দাস বলছেন, ‘‘একের পর এক এই বাধা কিছুতেই মানতে পারছে না তৃণমূল। আর সেই কারণেই ওরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তবে পড়ে পড়ে মার খাওয়ার দিন শেষ। আমরাও প্রতিবাদ-প্রতিরোধের রাস্তা থেকে সরছি না।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা নদিয়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ বলছেন, ‘‘এ সবই মিথ্যে অভিযোগ। সাজানো ঘটনা।’’

জোটের দাবি, পুরভোটে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গয়েশপুর পুরসভা দখল করেছিল তৃণমূল। তারা এ বারেও ভোটের দিন গয়েশপুরের কোনও বুথেই জোট প্রার্থীর এজেন্ট দিতে দেয়নি। তবে হুমকি উপেক্ষা করেই ভোট দিতে গিয়েছিলেন জোটের কর্মী সমর্থকেরা। আর সেই কারণে তৃণমূল ভোটের পরেও তাণ্ডব চালাচ্ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গয়েশপুর থেকে গেল গয়েশপুরেই! প্রশাসন সক্রিয় থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত।

তবে পুলিশের দাবি, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। শনিবার রাতে বোমাবাজির অভিযোগে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে গয়েশপুরের কাঁটাগঞ্জে বোমার আঘাতে জখম হয়েছিলেন পার্থসারথি চক্রবর্তী নামে এক পশু চিকিৎসক। সেই ঘটনাতেও গাদি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য জানিয়েছেন, গয়েশপুর থেকেই গাদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE