এক থেকে কুড়ি নম্বরের তালিকায় ন’জন। দশের মধ্যে তিন জন— তৃতীয়, ষষ্ঠ এবং দশম। ১৪ নম্বরে তিন জন। ১৬, ১৭ আর ২০তম স্থানে এক জন করে।
চুম্বকে এই হল এ বার মাধ্যমিকে চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির কৃতী তালিকা। মোট পরীক্ষা দিয়েছিল ২১০ জন। মঙ্গলবার ফল বেরনোর পরে দেখা গেল, তাদের সকলেই পাশ করেছে। প্রত্যাশিতই ছিল। গত বিশ বছরে এই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে কেউ ফেল করেনি।
এ বার তৃতীয় স্থানে থাকা শুভ্রজিৎ মণ্ডল পেয়েছে ৬৮১ নম্বর। গত বারের চেয়ে ১২ নম্বর বেশি। গত বার স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর ছিল ৬৬৯। পরীক্ষা দিয়েছিল ১৭৯ জন। ভাল ফল করতে থাকায় পড়ুয়াদের ভিড় দিন-দিন বাড়ছে।
প্রধান শিক্ষক আনন্দময় মণ্ডল বলছেন, ‘‘প্রতি বছরই আমাদের ফল ভাল হয়। ১১ থেকে ২০-র মধ্যে কেউ না কেউ থাকে। এ বার আরও ভাল হয়েছে।’’ কী করে হল? কী এই সাফল্যের রসায়ন? প্রথমত, এক থেকে দেড় মাস আগে পাঠ্যসূচি শেষ করে দেওয়া। শিক্ষকেরা সেটা দায়িত্ব নিয়ে করেন। দ্বিতীয়ত, অভিভাবকরা সজাগ। তাঁরাও নজরদারি চালান। প্রধান শিক্ষক হাসছেন, ‘‘সকলের চেষ্টায় আমরা এগিয়ে চলেছি।”
এমনিতে স্কুলটি বহু দিনের পুরনো। ১৯০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে অনুমোদন দেয়। প্রথমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, তার পরে মাধ্যমিক, এখন উচ্চ মাধ্যমিকেরও অনুমোদন রয়েছে। দু’টো ক্যাম্পাস। পুরনোটা চাকদহ স্টেশনের কাছে। সেখানে শুধু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হয়। কিলোমিটার খানেক দূরে তালতলায় নতুন বাড়িতে সরে গিয়েছে মাধ্যমিক বিভাগ। সব নিয়ে হাজার দুয়েক পড়ুয়া।
দুই কৃতী। দেবাঞ্জন ও সৌম্যজিৎ।
ভাল ফল হচ্ছে ঠিকই, তা বলে স্কুলে সমস্যা নেই তা নয়। ২০০২ সাল থেকে প্রায় ন’বছর স্কুলটিতে কোনও প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। যার প্রভাব পড়েছে পরিকাঠামো উন্নয়নে। ঠিকঠাক ক্লাসঘর আছে মাত্র পাঁচটা। বাকিগুলোতে কোনও মতে কাজ চলে। ৪৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন ৪৩ জন। তবে পড়া নিয়ে পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, কারও কোনও অভিযোগ নেই। ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি কড়া নিয়মশৃঙ্খলা মানতে শেখানো তাঁদের নিশ্চিন্ত রাখে— জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা।
স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক সোমনাথ মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করি, ক্লাসে এমন ভাবে পড়াতে যাতে স্পষ্ট করে বিষয়টা বুঝতে পারে। আর কারও সাহায্য না লাগে।’’ উপস্থিতির দিকেও কড়া নজর থাকে স্কুলের। কোনও ছেলেমেয়ে নিয়মিত স্কুলে না এলে, তার অভিভাবককে ডেকে এনে বিষয়টি জানানো হয়। তাতে ভাল ফল পাওয়ায় যায়।’’ সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘প্রথমে অনেক অভিভাবক একটু রেগে যান। পরে তাঁরাই বলেন, স্যার, সে দিন এটা না করলে আমার ছেলেটা ভাল রেজাল্ট করত না।’’