Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
চরকাঁটা ১

জওয়ানদের গালমন্দ গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে

জলঙ্গির পরাশপুর ও উদয়নগর খণ্ড চরের কয়েক হাজার মানুষকে এ প্রমাণ দিতে নিত্য। প্রমাণ দিতে হয় হ্যাঁ তাঁরা ভারতীয়।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

‘ইয়ে থোবড়া তেরা হ্যা!’ ভোটার কার্ডটি হাতে প্রায় সত্তর বৃদ্ধকে প্রশ্নটি ছুড়ল বছর সদ্য যুবা জওয়ান। বৃদ্ধ কাঁপা কাঁপা গলায় অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ছবিটা তাঁর বছর কয়েক আগের তোলা, তাই হয়ত চিনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে, ছবিটা আদতে তাঁরই। রোজ সকাল বিকেল পকেটে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কার্ডটা মলিন হয়ে গেছে।

কথায় কান না দিয়ে একের পর এক হিন্দিতে গালমন্দ দিতে থাকে জওয়ান। ঘণ্টা খানেক লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রেহাই মিলেছিল কাশেম আলির। এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। যেমন নয়, বৃদ্ধা আকলেমা বেওয়ার হেনস্থা হওয়ার ঘটনা। তাঁকে বাজার থেকে চালডাল, আনাজ নিয়ে চরের ঘরে ফিরতে প্রতি দিনই বিএসএফের এমন প্রশ্ন আর গালাগালের শিকার হতে হয়। ব্যাগ উল্টে দেখাতে হয় আর কিচ্ছিটি নেই তার ব্যাগে।

জলঙ্গির পরাশপুর ও উদয়নগর খণ্ড চরের কয়েক হাজার মানুষকে এ প্রমাণ দিতে নিত্য। প্রমাণ দিতে হয় হ্যাঁ তাঁরা ভারতীয়। প্রমাণ দিতে হয় তাঁরা যে চাল-ডাল নিয়ে যাচ্ছেন তা বাংলাদেশ নয় ঘরের হেঁশের জন্য। চরের বাসিন্দাদের দাবি, কেবল গালাগাল নয়, কখনও কখনও প্রতিবাদ করতে গেলে মার পর্যন্ত থেতে হয় তাঁদের।

চর পরাশপুরের বাসিন্দা এলাকার ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য জাবদুল মণ্ডল বলেন, ‘‘আদতে আমাদের কাছে ওই গালাগাল গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই নিয়মেই চলছি আমরা। আমাদের এলাকার নতুন প্রজন্ম জেনে গেছে এই নিয়মটা। এখন আর এ নিয়ে অভিযোগ করতেও ইচ্ছে করে না।’’

পদ্মা ওদের সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে। সব হারিয়ে মাথা গুঁজতে পরিকাঠামোহীন ধুধু বালুচর কোনওক্রমে ঠাঁই নিয়েছে হাজার চারেক মানুষ। নেই রাস্তা নেই বিদ্যুৎ বা স্বস্থ্য়ের মতো জরুরি পরিষেবা। নেই এর তালিকাটি সেই লম্বা হলেও নিত্যদিন হয়রানির তালিকা ছোট নয়, নুন থেকে তেল বা চাষের জমিতে দেওয়ার সার বা কীটনাশক নিয়ে গেলেও বিএসএফের হাজারও কৈফিয়তের সামনে পড়তে হয় তাঁদের। উদয়নগর খণ্ড চরের বাসিন্দা জাফের আলির কথায়, ‘‘হাট বাজার সেরে ফেরার পথে যে ভাবে অপমানিত হতে হয় সেটা প্রায় মেনে নিয়েছি আমরা। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন কেউ এলে মিষ্টির প্যাকেটা হাতে করে আসার সময় বড় গায়ে লাগে। ঘরে কুটুম আসাই বন্ধ হয়ে গেছে।’’

আছে, বিয়ের পাকা কথা বলতে চরে কেউ এলেও। তাই চরের মানুষের বিয়ে এখন চরের স্বজাতির মধ্য়েই থমকে গেছে প্রায়। বাইরের মানুষ চরে বিয়ে দিতেও চান না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jawan Malicious Words Voter Card Jalangi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE