Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঝুলনের মুখে ভাত দিলেন সদর হাসপাতালের সুপার

মা মানসিক ভারসাম্যহীন। খোঁজ নেই বাবার। তাই বলে কি ঝুলনের অন্নপ্রাশন হবে না?  মানতে পারেননি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা। শুক্রবার কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালে হইহই করে পালিত হল ঝুলনের অন্নপ্রাশন।

রাজকন্যে: মামা-মাসিদের সঙ্গে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

রাজকন্যে: মামা-মাসিদের সঙ্গে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে। শুক্রবার, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

মা মানসিক ভারসাম্যহীন। খোঁজ নেই বাবার। তাই বলে কি ঝুলনের অন্নপ্রাশন হবে না? মানতে পারেননি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা। শুক্রবার কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালে হইহই করে পালিত হল ঝুলনের অন্নপ্রাশন।

সকাল থেকে এসএনসিইউতে ছিল সাজ সাজ রব। গেটের সামনে সাজানো হয়েছিল রংবেরঙের বেলুন। লেখা হয়েছিল ঝুলনের নাম। যাঁদের সেই সময় ডিউটি ছিল না, এ দিন তাঁরাও হাজির হয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। চলে আসেন হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ও।

মাস কয়েক আগে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অন্তঃসত্ত্বা বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানেই কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি। বাচ্চার ঠাঁই হয় এসএনসিইউতে। হাসপাতালের কর্মীরাই নাম রাখেন—ঝুলন। আর তার মাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মানসিক বিভাগে। সেই থেকে ঝুলন বেড়ে উঠছে তার ‘মামা’ আর ‘মাসি’দের কোলে। এর আগেও শান্তিপুর হাসপাতালে হাতবদল হয়ে আশ্রয় নেওয়া এক শিশুর অন্নপ্রাশন করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, ‘‘এমন অনুষ্ঠানের কথা শুনে না এসে পারলাম না। বড় ভাল লাগল।’’ ভাতের থালায় পাঁচ রকমের ভাজা, ফুলকপির তরকারি, ডাল, মাছ, পায়েস আর মিষ্টি। সামান্য একটু ভাত তুলে নিয়ে ঝুলনের মুখে দিলেন হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার। ধান-দুব্বো দিয়ে আশীর্বাদ করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়। নার্স মাধবী অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে তুলতে বলছিলেন, ‘‘জন্মের পর থেকে ওকে তো আমরাই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি।”

এ বার ঝুলনকে চলে যেতে হবে হোমে। কথাটা শুনে সকলের মনখারাপ হয়ে যায়। তখনই সকলে সিদ্ধান্ত নেন, ঝুলন যখন চলেই যাবে, অন্নপ্রাশনটা করলে কেমন হয়? এক কথাতেই রাজি হয়ে যান সকলে। মেলে সুপারের অনুমতিও। এ দিন ঝুলনের জন্য নিজে হাতে ভাত-তরকারি রান্না করে নিয়ে আসার দায়িত্ব নেন সিনিয়র নার্স শর্মিলা দাস।

নাম ধরে ডাকলেই খিলখিলিয়ে ওঠে ঝুলন। এ দিন হলুদ জামা পরিয়ে ফুলের গয়নায় সাজানো হয়েছিল তাকে। ‘‘দেখুন, দেখুন, ঝুলনকে কেমন রাজকন্যের মতো দেখাচ্ছে!’’ বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন হাসপাতালের এক নার্স। তার পরে চোখ মুছে বলছেন, ‘‘হোম আর বাড়ি তো এক নয়। আমরা সেখানে গিয়েই ওকে মাঝেমধ্যে দেখে আসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Eating Ceremony Hospital Hospital Super
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE