Advertisement
E-Paper

রোদ চড়তেই শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, আতঙ্কে মাঝিরা

শীতের শেষাশেষি হু হু করে শুকিয়ে যাচ্ছিল নদীর জল। নবদ্বীপ আর মায়াপুরের মাঝখানে গঙ্গার বুকে জেগে উঠেছিল এক বিরাট চর। তখনও ভটভটি নৌকার সে ভাবে চল হয়নি নবদ্বীপের গঙ্গায়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৬
বিপথে: এখান দিয়েও এক সময় বয়ে যেত নদী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

বিপথে: এখান দিয়েও এক সময় বয়ে যেত নদী। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

শীতের শেষাশেষি হু হু করে শুকিয়ে যাচ্ছিল নদীর জল। নবদ্বীপ আর মায়াপুরের মাঝখানে গঙ্গার বুকে জেগে উঠেছিল এক বিরাট চর। তখনও ভটভটি নৌকার সে ভাবে চল হয়নি নবদ্বীপের গঙ্গায়। সে বার হাল বেয়ে আর লগি ঠেলে মাঝিরা কোনও রকমে প্রায় শুকিয়ে আসা নদীর বুকে খেয়া পারাপার সামলে ছিলেন।

সময়টা ছিল আটের দশক। সেই ঘটনার তিন দশক পেরিয়ে এসে নবদ্বীপের গঙ্গা ও জলঙ্গিতে শুখা মরশুমে জলস্তর নেমে যাওয়া বাৎসরিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। খেয়া পারাপার করতে গিয়ে সঙ্কটে পড়ছেন মাঝিরা। সেই দোলের সময় থেকেই এ বছর জলস্তর নামতে শুরু করেছে। প্রায় মাস খানেক ধরে নবদ্বীপে গঙ্গা, বিশেষ করে জলঙ্গির জলস্তর নেমেই চলেছে। ফলে নবদ্বীপ-মায়াপুর, মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জের মধ্যে নৌ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। স্থায়ী জেটির বদলে নৌকা ভিড়ছে অস্থায়ী জেটিতে।

নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল জানান, শীতকাল পড়লেই নদীর শুখা মরশুম শুরু হয়ে যায়। কার্তিক থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত নদীতে জল কমতে থাকে। চৈত্র-বৈশাখে প্রতিবারই জল তলানিতে ঠেকে। কিন্তু এ বারে ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকেই জল নামা শুরু হয়েছে। মাঝিদের কথায়, ‘‘অগভীর জলপথ দিয়ে চলাচলা করতে গিয়ে যাত্রীবোঝাই নৌকার মোটরের পাখা এবং ‘শ্যাফট’ নদীপাড়ের পাথর, বোল্ডার ও নদীগর্ভের মাটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যাচ্ছে। একের পর এক নৌকা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মাঝনদীতে যাত্রীবোঝাই নৌকার যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় নৌকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেসে যাচ্ছে দু’তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। কখনও ভাসতে ভাসতে গৌরাঙ্গ সেতুর তলা পর্যন্ত চলে যাওয়া সেই সব নৌকা ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন মাঝিরা।

নবদ্বীপে গঙ্গা ও জলঙ্গি দিয়ে মোট তিনটি রুটে ছ’টি জেটি দিয়ে ফেরি চলাচল করে। নবদ্বীপ ঘাটের দু’টি জেটি থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর এবং নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। অন্য দিকে মায়াপুরের হুলোর ঘাট থেকে জলঙ্গি নদীপথে মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। তিনটি রুটের ছ’টি জেটির মধ্যে জলস্তর
নেমে যাওয়ার ফলে ইতিমধ্যে জলঙ্গির উপরে মায়াপুর ঘাটের স্থায়ী জেটি ব্যহারের উপযুক্ত নেই। বদলে নবদ্বীপ থেকে মায়াপুরগামী সব নৌকা ভিড়ছে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গঙ্গার উপর অস্থায়ী জেটিতে।

মূল খেয়াঘাটের বদলে নৌকা অন্যত্র ভিড়ছে বলে যাত্রীদের অনেকটা মেঠো পথ হাঁটতে হচ্ছে। বৃষ্টি নামলে সেই পথের চেহারা ভেবেই ভয় পাচ্ছেন সকলে। নৌকার মাঝিরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জলের অপেক্ষা করা ছাড়া এখন কিছুই করার নেই। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সভাপতি গোপাল দাস বলেন, “পরিস্থিতি প্রতি বছরই অন্য বারের থেকে বেশি খারাপ হচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে জল নেমেই চলেছে। নিরুপায় হয়ে ঘাট স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছি। অস্থায়ী এই সব ঘাটে আমাদের নতুন করে সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আলো থেকে শেড। প্রচুর বাঁশের মাচা তৈরি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিরাট আর্থিক দায়ও আমাদের বহণ করতে হচ্ছে।”

বিষয়টি নিয়ে মায়াপুর ঘাটের ভারপ্রাপ্ত শশাঙ্ক হালদার বলেন, “বছর কয়েক ধরে এই জিনিস ঘটছে। যার ফলে পরিবহণ সমিতির সাত থেকে আট লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এই ব্যয়ও আসলে এক ধরনের আর্থিক ক্ষতি।”

Fishermen Worry Nabadwip River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy