Advertisement
E-Paper

পোড়া হাসপাতাল ঝলসাল রূপ-টানে

আগুন? সে তো কবেকার কথা! ‘‘তার পরে কত ছাই উড়ে গেল’’, ভিড়ের মাঝে ভাঙা দাঁত বের করে হাঁসছেন মহিলা। সিআইডি, ‘ষড়যন্ত্র’, পল্টু-গ্রেফতার, এমনকী সে গ্রেফতারের প্রতিবাদও ঝিমিয়ে এসেছে। দগ্ধ হাসপাতালের সেই পোড়া ঘরের কার্নিশে এখন ফের শালিখের হুটোপুটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
একটু ছুঁয়ে দেখা।মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

একটু ছুঁয়ে দেখা।মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আগুন? সে তো কবেকার কথা!

‘‘তার পরে কত ছাই উড়ে গেল’’, ভিড়ের মাঝে ভাঙা দাঁত বের করে হাঁসছেন মহিলা।

সিআইডি, ‘ষড়যন্ত্র’, পল্টু-গ্রেফতার, এমনকী সে গ্রেফতারের প্রতিবাদও ঝিমিয়ে এসেছে। দগ্ধ হাসপাতালের সেই পোড়া ঘরের কার্নিশে এখন ফের শালিখের হুটোপুটি। আর, হাসাপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে দু-একটা উৎসাহী মুখ সাইকেল থামিয়ে চোখের উপর তালুর নৌকা তুলে বলছেন, ‘‘ওই যে, দেখছিস না, ওই কোণার ঘরটা রে!’’

নিভে আসা সেই আগুনে, বৃহস্পতিবার, নিতান্তই আটপৌরে, কালো-হলুদ পাড়ের সাদা সুতির শাড়ি, রূপা গাঙ্গোপাধ্যায়ের পা পড়তেই ফের যেন দপ করে জেগে উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতাল। বিজেপি নেত্রী-টেত্রী নয়, স্রেফ রূপা’দিকে দেখতে একেবারে ভেঙে পড়ল হাসাপাতাল।

মনমরা আয়াদের কান ছোঁয়া হাসি, উঠতি তরুণদের স্নানগ্লাস খুলে হাঁ মুখ, আর গাম্ভীর্যের আড়ালই বরাবর পছন্দ করা নেতারাও থম মেরে দেখলেন নেত্রীর ‘স্টরডম’!

ধোপদুরস্ত যে কঠিন মুখের নার্স রাত দিন রুখু ব্যবহারের জন্য খ্যাত, পরদার ফাঁক দিতে উঁকি মেরে তাঁকেও এ দিন দেখা গেল বিগলিত জোড় হাতে। আর সদা গম্ভীর চিকিৎসক? যিনি কাউকেই তেমন তোয়াক্কা করেন না। এ দিন তিনিও রূপার মুখোমুখি পড়ে গিয়ে এমন একটা বিচলিত হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যা দেখে বরং একটু অস্বস্তিতেই পড়ে গেলেন স্বয়ং রূপা।

রূপার পিছনেই, হাসপাতাল ‘পরিদর্শনে’ পাড়ি দেওয়া ভিড় থেকেই কখনও বেরিয়ে এল নেত্রীকে ছোঁয়ার চেষ্টা কখনও বা উড়ে এল ‘‘এখনও কী গ্যামার (পড়ুন গ্ল্যামার) দেখেছিস!’’

রূপাকে দেখতে উঁকি নার্সদের। — নিজস্ব চিত্র।

হাত মিলিয়ে, সই বিলিয়ে, খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে হাসপাতালের হাল হকিকত বিজেপি নেত্রীও বলছেন— ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সব কিছুর মধ্যেই ষড়যন্ত্র দেখেন। এই আগুন লাগার পিছনেও তিনি ষড়যন্ত্র দেখছেন। এখানে কোনও ষড়যন্ত্র বয়নি, যা হয়েছে তা হাসাপাতালের গাফিলতি।’’

বৃহস্পতিবার, ওই হাসাপাতেল গিয়ে বিজেপি-র মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী রুপা গঙ্গোপাধ্যায় সেই গাফিলতির অভিযোগের পাশাপাশি জানাচ্ছেন— হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সিঁড়ি ও র‌্যাম্প বন্ধ থাকায় একটা সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে মানুষ মারা গিয়েছে।

তার পরে যোগ করছেন, ‘‘কেন্দ্রের টাকায় হাসপাতালের বাইরে নীল-সাদা রং করছেন, অথচ ভিতরে পরিকাঠামো ও পরিষেবার বেহাল দশা।’’

বছর দুয়েক থেকে র‌্যাম্পের যে অংশটি ‘প্লাস্টার রুম’ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এ দিন সেখানে দাঁড়িয়েই রূপা বলছেন, ‘‘আর দেখেছেন হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনা জমে তো ডেঙ্গির চাষ হচ্ছে। পরিকাঠামো বলে কিছুই নেই।’’

শনিবার দুপুরে, এসি ভিআইপি কেবিনে আগুন লাগার সময় ওই হাসপাতালের দু’টি সিড়ির মধ্যে একটির দরজা তালাবন্দি ছিল, বন্ধ ছিল র‌্যাম্পও। এ দিন সবই ঘুরে দেখেন তিনি। সঙ্গে আয়া-নার্স- হাসাপাতালের কর্মী থেকে ছেলে-বউ-শাশুড়িকে দেখতে আসা বাড়ির লোকের চোখ জুলজুল মুখ।

হাসপাতালের অধ্যক্ষ অজয়কুমার রায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। অধ্যক্ষ তাঁকে জানান, র‌্যাম্প ও সিঁড়ি বন্ধ ছিল না। এ সবই ‘বানানো খবর’। সবই খোলা ছিল। কিছুই বন্ধ ছিল না। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘আগুন পুড়ে কেউ মারা যায়নি। ধোঁয়ার দমবন্ধ হয়ে না হয় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’’

Rupa Ganguly Murshidabad medical college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy