E-Paper

শিক্ষক মাত্র এক জন, পরীক্ষায় নজরদারের ভূমিকায় রন্ধনকর্মী

কয়েক দিন ধরে এই স্কুলে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। দু’টি শ্রেণিকক্ষে চারটি শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। একা পরীক্ষা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বদরুল।

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৯
পরীক্ষার হলে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রাধুনি। হরিহরপাড়ার শ্রীপুর জুনিয়র হাইস্কুলে।

পরীক্ষার হলে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রাধুনি। হরিহরপাড়ার শ্রীপুর জুনিয়র হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

দোতলা স্কুল ভবন। ৭১ জন পড়ুয়া। তবে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। মাত্র এক জন অতিথি শিক্ষক বদরুল ইসলামের উপরেই সব দায়িত্ব। তিনিই শিক্ষক, তিনিই শিক্ষাকর্মী। এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার শ্রীপুর জুনিয়র হাইস্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার সময়ে শ্রেণিকক্ষে নজরদারি করতে দেখা গেল স্কুলেরই মিড-ডে মিলের রন্ধনকর্মী রেকসোনা বিবিকে।

কয়েক দিন ধরে এই স্কুলে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। দু’টি শ্রেণিকক্ষে চারটি শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। একা পরীক্ষা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বদরুল। ফলে একটি শ্রেণিকক্ষে নজরদারের ভূমিকা নিয়েছেন রেকসোনা। গত কয়েক দিন ধরে মেয়েদের ঘরে গার্ড দিচ্ছেন তিনি। ছেলেদের ঘরে গার্ড দিচ্ছেন বদরুল।

বদরুল বলেন, “একাই চারটি শ্রেণি সামলাতে হয়। এখন দু’টি ঘরে পরীক্ষা চলছে। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পড়ুয়াদের উপর নজরদারির কাজ করার জন্য মিড-ডে মিলের রন্ধনকর্মীকে বলেছি। শিক্ষক নিয়োগ না হলে এ রকম অনেক স্কুলের দরজা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।” রেকসোনা বলেন, “শিক্ষক মাত্র এক জন। দুটো ঘরে পরীক্ষা চলছে। স্যার একা সামলাতে পারছেন না। তাই মেয়েদের ঘরে গার্ড দিতে আমাকে বলেছেন।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অধিকাংশ জুনিয়র হাই স্কুল এই ভাবেই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। দীর্ঘদিন আইনি জটিলতার পরে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ের পরে অনেক স্কুলে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগও হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্কুল সূত্রে খবর, তার পরেও উচ্চ প্রাথমিকে বহু আসন ফাঁকাই থাকছে। অনেক শিক্ষক বিভিন্ন হাই স্কুল বেছে নিলেও জুনিয়র হাই স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি বলে জেলার বিভিন্ন ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

২০১০ সালে তৈরি হয় শ্রীপুর জুনিয়র হাই স্কুল। এক জন স্থায়ী শিক্ষক ও দু’জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে শুরু হয় পঠনপাঠন। দুই অতিথি শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন বদরুল। বছর কয়েক আগে অন্য স্কুলে বদলি হন ওই স্কুলের এক মাত্র স্থায়ী শিক্ষক। এক জন শিক্ষাকর্মীও ছিলেন, তিনিও যোগ দিয়েছেন অন্য চাকরিতে। ফলে বর্তমানে একাই স্কুল সামলান বদরুল।

বদরুলেরও চাকরির মেয়াদ আর এক বছর। নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না হলে স্কুলে পড়ানোর কেউ থাকবে না। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও। রেকাত আলি নামে এক অভিভাবক বলেন, “শিক্ষক নেই। ফলে বাড়ির কাছে স্কুল ছেড়ে ছেলেকে ছ’কিলোমিটার দূরে হাই স্কুলে ভর্তি করেছি।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর কুমার শীল বলেন, “উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ চলছে। শিক্ষক নিয়োগ হলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে যে সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, তাতে বহু শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hariharpara

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy