Advertisement
E-Paper

বাঘ-মশা চেনাচ্ছে ভাতজাংলা স্কুল

মাইকে তখন এডিস মশা কেমন দেখতে তা বলে চলেছেন জেলার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ সুদেষ্ণা চক্রবর্তী। প্রজেক্টরের পর্দায় এডিস মশার ছবি দেখিয়ে তিনি বলছেন, “গায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা। বাঘের মতো। তাই এই মশাকে বাঘ মশাও বলে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৮
জল জমতে দেবেন না। এলাকা পরিষ্কার রাখুন। গ্রামের বাসিন্দাদের সচেতন করছে ভাতজাংলার কালীপুর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

জল জমতে দেবেন না। এলাকা পরিষ্কার রাখুন। গ্রামের বাসিন্দাদের সচেতন করছে ভাতজাংলার কালীপুর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

প্রজেক্টরের পর্দায় মশার লার্ভা কিলবিলিয়ে উঠতেই অবাক হলেন লালবানু বেওয়া। পাশে দাঁড়ানো মহিলার গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলেন, “আরে! এতো পুরো কেঁচোর মতো দেখতে।”

মাইকে তখন এডিস মশা কেমন দেখতে তা বলে চলেছেন জেলার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ সুদেষ্ণা চক্রবর্তী। প্রজেক্টরের পর্দায় এডিস মশার ছবি দেখিয়ে তিনি বলছেন, “গায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা। বাঘের মতো। তাই এই মশাকে বাঘ মশাও বলে।” কথা থামিয়ে তিনি পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, “মশাটার নাম কি?” গ্রামের রাস্তার মোড়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে মহিলারাও গলা মেলান, “বাঘ মশা।” নাহ্, এটা কোনও ডেঙ্গি মোকাবিলার কর্মশালা নয়, কৃষ্ণনগরের কাছে ভাতজাংলা কালীপুর হাইস্কুলের পড়ুয়াদের ডেঙ্গি প্রতিরোধের কর্মসূচি। শুক্রবার স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক-সহ কয়েক জন শিক্ষকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল স্কুলের পড়ুয়ারা। সঙ্গে ছিল লিফলেট, প্লাকার্ড, কেরোসিন, ব্লিচিং পাউডার, প্রজেক্টর মেশিন আর পর্দা। স্কুল থেকে বেরিয়ে তারা দল বেঁধে স্কুলের আশেপাশের পিছিয়ে পড়া ভাতজাংলা বকুলতলা, মুসলিমপাড়া, মনসাপাড়া, বর্ধনপাড়া, শ্রীদুর্গাপাড়া এলাকায়া ঘুরে ঘুরে কেরোসিন ও ব্লিচিং ছড়াতে থাকে। সেই সঙ্গে পথ চলতি মানুষের হাতে ধরিয়ে দেয় লিফলেট। তারা ছোট দলে ছড়িয়ে পড়ে বাড়ি বাড়ি।

নিজেরা দেখে, কোথাও জল জমে আছে কি না। থাকলে সেই বাড়ির সদস্যদের বুঝিয়ে বলা হয়, বাড়ির আশেপাশে যেন জল না জমে। মশার লার্ভা দেখলেই ঢেলে দিতে হবে কেরোসিন আর ব্লিচিং। এরই ফাঁকে ছাত্রদের একটা দল চলে যায় পাড়ার মোড়ে। বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে কোনও মতে বাসিয়ে ফেলে নড়বড়ে তাঁবু। তার মধ্যে লাগিয়ে দেয় প্রজেক্টর মেশিন আর পর্দা। ছাত্রীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসে মহিলাদের।

তাদের সামনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবি দেখিয়ে ডেঙ্গি সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেন পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ সুদেষ্ণা। তিনি বলেন, “পরিষ্কার জমা জলে মশা জমে। জল জমতে দেবেন না। জ্বর হলে সরাসরি হাসপাতালে চলে যাবেন।” সে সব কথা শোনেন গ্রামের মহিলারা। প্রধানশিক্ষক সজিত সরকার বলেন, “সরকার চাইছে পড়ুয়াদের মাধ্যমে ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে। আমরা সেটাই বাস্তবায়িত করতে চেয়েছি। আর আমরা কিছুটা হলেও সফল।” আর এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে নিয়ে আসা হয় সিডি। স্কুলের প্রজেক্টর তো আছেই। আর এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল সুদেষ্ণাকে। একে একে মুসলিমপাড়া, বকুলতলা, বর্ধনপাড়ায় প্রচার শেষ হতে হতে বেলা পড়ে আসে। বাড়ি ফেরার পথে সাহানাজ বিবি, সাবিনা বিবিরা বলেন, “বাড়ি গিয়ে এ বার ভাল করে খুঁজে দেখতে হবে, কোথাও কোনও রকম জল জমে আছে কি না।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “স্কুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সমস্ত স্কুল এগিয়ে এলে সচেতনতা বেড়ে যাবে।”

Dengue Mosquitoes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy