প্রায় এক মাস হতে চলল। কিন্তু তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় তামান্না খাতুন খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ১৪ জন এখনও অধরা। তাদের অবিলম্বে ধরার দাবিতে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। সেই কর্মসূচিতে ব্যারিকেড ভাঙা এবং পুলিশের লাঠি চালানো মিলিয়ে ঘিরে খানিকটা সময় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় পুলিশ সুপার দফতরের চত্বর।
তবে তার আগেই পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-র সঙ্গে দেখা করেন তামান্নার মা-বাবা। সেখানে পুলিশ সুপার ছাড়াও বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। জেলা পুলিশের দাবি, তদন্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন খুঁটিনাটি তাঁদের জানানো হয়েছে। তবে তাঁরা অধরা অভিযুক্তদের ধরার দাবিতেই অনড় থাকেন। পুলিশ সুপার তাঁদের প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত ২৩ জুন কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বোমাবাজিতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের তামান্না খাতুনের। তামান্নার পরিবারের তরফে ২৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার মধ্যে এত দিনে পুলিশ মোট ১০ জনকে ধরতে পেরেছে। এ দিন পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে তামান্নার মা সাবিনা খাতুন বলেন, “এক মাস হতে চলল। এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ সুপারকে সব কথা বলেছি। তিনিও সবটা শুনেছেন। আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।”
সেই সঙ্গেই সাবিনার হুঁশিয়ারি, “আর কিছু দিন দেখব। তার পরেও ওরা যদি গ্রেফতার না হয়, তা হলে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে অন্য কথা ভাবব।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা সুপার অমরনাথ কে অবশ্য বলেন, “এ দিন সিট-এর সমস্ত সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। আমরা তামান্নর মা-বাবাকে তদন্ত সম্পর্কিত খুঁটিনাটি জানিয়েছি। তাঁদের পরামর্শও আমরা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছি। প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
সিপিএমের ছাত্র-যুবর পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও কর্মসূচি উপলক্ষে এ দিন সকাল থেকে পোস্ট অফিস মোড় থেকে পুলিশ সুপারের দফতরে যাওয়ার গোটা রাস্তা কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আধিকারিকদের নিয়ে আসা হয়। এমনকি মুর্শিদাবাদ জেলার উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। দু’টি ব্যারিকেডের সামনে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
পূর্বঘোষিত সময়ের অনেক পরে বামেদের মিছিল পুলিশ সুপারের দফতরের দিকে রওনা হয়। প্রথমে কলেজ মাঠের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে তাদের আটকানোর চেষ্টা হয়। বিক্ষোভকারীরা সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান। কিছু দূরে রবীন্দ্রভবনের কাছে দ্বিতীয় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা যাতে সেটা ভাঙতে না পারেন তার জন্য তা বাঁশ ও লোহার জাল দিয়ে পোক্ত করা হয়েছিল। বিশাল বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ কর্তারা। সেই দ্বিতীয় ব্যারিকেডের কাছে আসতেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয়। তখনই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এই সময় পুলিশ লাঠি চালালে ধুন্ধুমার বেধে যায়। বাম কর্মীদের কেউ-কেউ ঝান্ডার ডান্ডা উঁচিয়ে পাল্টা তেড়ে যান।
পুলিশের দাবি, এই সংঘর্ষে তাদের চার কর্মী আহত হন। বামেদের দাবি, এসএফআইয়ের নদিয়া জেলা সম্পাদক সূ্র্যবন্ত ডি চৌধুরী-সহ ১০ জন বিক্ষোভকারী জখম হয়েছেন, তার মধ্যে দুই যুবনেত্রীও আছেন। তাঁদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা দাবি করেন, “শান্তিপূর্ণ মিছিল করে গিয়ে আমরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলান। কিন্তু পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালায়। আমাদের বহু কর্মী আহত হয়েছেন। সব খুনি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।” পুলিশ সুপার বলেন, “দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। তাত সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)