রাস্তার ধারে জটলা প্রতিবেশীদের। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
ফোনটা এসেছিল ভোর তিনটে নাগাদ। মোবাইলের ও প্রান্ত থেকে বিশ্বাসবাড়ির জামাই তথা ওই গাড়ির চালক মানব মণ্ডল কোনও রকমে বলতে পেরেছিলেন—‘বড় বিপদ হয়ে গিয়েছে গো। তোমরা তাড়াতাড়ি চাপড়ায় চলে এস।’ পরে হোগলবেড়িয়ার দেওয়ানপাড়ার বিশ্বাস পরিবার জানতে পারে যে, দাহ করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে একই পরিবারের ছয় ভাই।
রবিবার সাতসকালে গোটা গ্রামে মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে সীমান্তঘেঁষা ওই জনপদ। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে বাদকুল্লায় জেঠতুতো দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে মানববাবু-সহ বিশ্বাস পরিবারের আট জন বেরিয়ে পড়েন। মৃতদের বোন চন্দনা মণ্ডল জানান, বাদকুল্লার ওই দাদা তাঁদের সকলেরই খুব প্রিয় ছিলেন। মৃত্যর আগে বেশ কয়েকবার দেওয়ানপাড়ায় এসে তিনি বলে গিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পরে তাঁকে দাহ করতে যেন এই বাড়ির সব ভাই যান। ওই দাদার কথা রাখতেই সকলেই একবাক্যে বেরিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এমনটা যে ঘটে যাবে তা কে জানত?
এ দিন মৃত্যুর খবর শোনার পরে গোটা গ্রাম যেন ভেঙে পড়ে বিশ্বাস বাড়িতে। সকলেরই মুখে একই কথা—‘ওই ছ’ভাই ছিল গোটা এলাকার অভিভাবক। কারও কোনও আপদে-বিপদে ওরাই ছিল বড় ভরসা।’ এলাকার বাসিন্দা প্রভাস ঘোষ, কমল ঘোষেরা বলছেন, ‘‘সীমান্তের এলাকা কেমন হয় সে তো জানেনই। মাঝেমধ্যেই চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা এসে এই এলাকার বহু গবাদি পশু নিয়ে গিয়েছে। রাত জেগে পাহারা দেওয়া কিংবা রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বাস বাড়ির এই ভাইগুলোই ছিল সকলের মুশকিল আসান।’’
রবিবার সারাদিন বিশ্বাসবাড়িতে লোকজনের আনাগোনা ছিল। সকলেই অপেক্ষায় ছিলেন মৃতদেহ ফেরার অপেক্ষায়। স্থানীয় এক বৃদ্ধের আক্ষেপ, ‘‘কত বার পুজো কিংবা অন্যান্য উৎসবের আলোচনায় ওদের আসার অপেক্ষা করতাম। আজ ওদের লাশ ফেরার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই বয়সে এমনটাও কপালে ছিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy