Advertisement
E-Paper

প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে কবে

পৌষের ভোরে ঝপাঝপ কোদালের কোপ। চুরি হয় নদীর পাড়। জমি হয়ে যায় পুকুর। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, দুই পড়শি জেলায় মাটি মাফিয়াদের দাপটে বদলে যাচ্ছে জমির চরিত্র। অচেনা হয়ে উঠছে চেনা নদী। প্রশাসনও কি শীতঘুমে? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৪
জমি ফাঁকা করে ফিরছে ট্রাক্টর।-নিজস্ব চিত্র।

জমি ফাঁকা করে ফিরছে ট্রাক্টর।-নিজস্ব চিত্র।

নিয়ম আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক!

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কৃষি জমির উপরে চাষআবাদ ছাড়া অন্য কিছু করতে গেলে কৃষি দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নেওয়া বাধ্যতামূলক। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে‌ গেলেও জরুরি ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমতি। কিন্তু সেই নিয়ম কি কোথাও মানা হচ্ছে?

গত কয়েক বছরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। অভিযোগ, তার মধ্যে বহু ভাটাই বেআইনি ভাবে তৈরি হয়েছে কৃষি জমির উপরে। এবং তাদের সৌজন্যেই মাটি মাফিয়াদের এমন বাড়বাড়ন্ত।

সে কথা মানছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেআইনি ইটভাটা ও মাটি মাফিয়াদের দাপটে অনেক সময় তাঁদের অজান্তেই জমির শ্রেণি বদলে যাচ্ছে। কৃষি জমি কিংবা নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার জন্য কখনই এনওসি দেওয়া হয় না। নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বুদ্ধদেব ধর বলছেন, ‘‘যদি কেউ এমনটা করে তা হলে সেটা বেআইনি।’’ ডোমকল মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জাফর আলি বলছেন, ‘‘এটা বরদাস্ত করা হবে না।’’

ডোমকলের এক কারবারি বলছেন, ‘‘যা করছি সে তো জমির মালিকের অনুমতি নিয়েই। আর আইন-টাইন যারা দেখে তাঁদেরকেও তো খুশি করে দিচ্ছি। তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?’’ চাপড়ার এক মাটি ব্যবসায়ী কবুল করছেন, ‘‘শীতের মরসুমে দু’টো বেশি
পয়সা আয়ের জন্যই এত কাঠখড় পোড়াচ্ছি। সবই যদি আইন মেনে করব তাহলে আর এত লোকের পকেট ভরছি কেন?’’

জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে প্রায় আটশো ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা খুবই কম। সেগুলো তাহলে চলছে কী ভাবে? বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘যত নষ্টের মূলে তো ওই বেআইনি ভাটাগুলোই। জমি, জমির মাটি, ফসলের ক্ষতি বন্ধ হবে যদি প্রশাসন আগে ওই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’’

নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীলকুমার পাল বলছেন, ‘‘আইন মেনেই আমরা সবাইকে ভাটা চালাতে বলি। কিন্তু কেউ যদি বেআইনি ভাবে নদীর পাড় কিংবা চাষের জমি থেকে মাটি কাটে আমরা কোনও ভাবেই তাদের পাশে নেই। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’

বছরের পর বছর ধরে বেআইনি কারবার চলছেই। প্রশাসনের কর্তারাও ভাঙা রেকর্ডের মতো বলে চলেছেন, ‘‘অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের এই শীত-ঘুম কি আদৌ ভাঙবে?

(চলবে)

Soil mafia Pond Land
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy