Advertisement
০৭ মে ২০২৪

সাইকেলটা কার, বন্দুকই বা কোথায়?

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল এই খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত বিধায়কের ছায়াসঙ্গী, তৃণমূল কর্মী মিলন সাহা।

এই মাঠ দিয়েই নাকি রাস্তায় ছুটেছিল আততায়ী। নিজস্ব চিত্র

এই মাঠ দিয়েই নাকি রাস্তায় ছুটেছিল আততায়ী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

মুকুল রায় ছাড়া চার জনের নাম রয়েছে বিধায়ক খুনের মামলায়। কিন্তু কার কী ভূমিকা ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশ তথা গোয়েন্দাদের কাছে। কী ভাবে এই খুন হল, তা নিয়েও ধন্দ কাটছে না। প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীও নাগালে আসেনি। এখনও ফিসফাসই সার পুলিশ মহলে। তার কতটা গল্প আর কতটা সত্যি, কর্তারা তা হলফ করে বলতেও রাজি নন।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল এই খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত বিধায়কের ছায়াসঙ্গী, তৃণমূল কর্মী মিলন সাহা। ইতিমধ্যে মুকুল ই-মেল মারফত উকিলের চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে। তাতে বলা হয়েছে, হয় অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে, অন্যথায় ক্ষমা চাইতে হবে। ওই চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে বুধবার গৌরীশঙ্কর বলেন, “ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কোন উত্তরও দেব না। উনি আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুন।”

গত শনিবার রাতে হাঁসখালির ফুলবাড়ি গ্রামে নিজের বাড়ির কাছেই সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান দেখার সময়ে গুলিতে খুন হন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। হাঁসখালি থানার ওসি খাতায়-কলমে তদন্তকারী অফিসার হলেও কার্যত সিআইডি-ই যা করার করছে। গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে দুই ধৃত সুজিত মণ্ডল এবং কার্তিক মণ্ডলকে জেরাও করছে তারা।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, বিধায়ককে খুন করার জন্য ঠিক তাঁর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল অভিজিৎ আর সুজিত। এলাকার ছেলে হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়নি। অভিযোগ যিনি দায়ের করেছেন, সেই মিলনও বিধায়কের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন বলে আগেই জানিয়েছেন। সত্যজিৎ নিজেও নাকি এক বার ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দেখেছিলেন। কিন্তু কিছু বলেননি। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ভিড় খানিক ফাঁকা হয়ে যেতে অভিজিৎ আচমকা ওয়ানশটার বের করে সামনে ডান দিক থেকে গুলি চালায়। কিন্তু অপর দুই অভিযুক্ত কার্তিক মণ্ডল এবং কালিদাস মণ্ডলের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে তদন্তকারীদের ধন্দ রয়েছে।

জেলা পুলিশের এক সূত্রের দাবি, পটকা ফাটার মতো আওয়াজ এবং তার পরেই বিধায়ক লুটিয়ে পড়ায় সকলে যখন হতচকিত, সেই সুযোগে পালায় দু’জনে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দুরে নিজের সাইকেল রেখে এসেছিল অভিজিৎ। তাতে চেপে কাছের একটি স্টেশনে গিয়ে সে দক্ষিণবঙ্গের ট্রেন ধরে। অথচ খুনের পরের দিনই পুলিশের অন্য সূত্রে বলা হয়েছিল, কাছেই এক মাঠে একটি সাইকেল পড়ে থাকতে দেখে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে সেটি অভিজিতেরই কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ দিন অভিজিতের পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়, তার সাইকেল বাড়িতেই রয়েছে। তাদের একটি মোটরবাইকও আছে। খুন করে পালানোর জন্য বাইকের পরিবর্তে সে সাইকেল বেছে নেবে কেন, সেই প্রশ্নও এড়ানো যাচ্ছে না।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, খুনের পরে অভিজিৎ আর সুজিত দু’জন দু’দিকে পালিয়েছিল। কিছুটা দৌড়ে পালানোর পরে একটি নির্জন জায়গা থেকে অভিজিতকে ফোন করে সুজিত। জানতে চায়, সে কোথায় রয়েছে। অভিজিৎ তার পিছনে না এসে তাকে অন্য দিকে যেতে বলে। সেই মতো সে হেঁটে বাদকুল্লার দিকে যাচ্ছিল। সেখানে পৌঁছনোর আগেই পুলিশ সন্দেহবশত তাকে আটকায়। কথাবার্তায় অসংলগ্নতা থাকায় তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের দাবি: পরে জেরায় সে পুরো ঘটনা কবুল করে। মোবাইল কল ডিটেলস খতিয়ে দেখার পরে তার কথার সত্যতা মিলেছে।

গত দু’দিন ধরেই তদন্তকারীরা দাবি করছেন, বিধায়ককে মারার ছক কষে অভিজিৎ আর সুজিত আঠারো হাজার টাকায় দু’টি ওয়ানশটার কিনেছিল। একটি ঘটনাস্থলের কাছেই পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের দাবি, অভিজিৎ সেটি ফেলে যায়। সুজিত তার অস্ত্রটি ধানখেতের কাদায় ফেলে দিয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছে। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা করা হয়, বুধবার রাত পর্যন্ত সুজিতকে সঙ্গে নিয়ে ওই ধানখেতে গিয়ে সেটি উদ্ধার করার চেষ্টা হয়নি। কার্তিক আর কালিদাসও যদি ঘটনাস্থলে থেকে থাকে, তারা কোন দিক দিয়ে পালাচ্ছিল, কার্তিক ধরা পড়লেও কালিদাস গায়েব হয়ে গেল কী ভাবে, সেই ধাঁধারও সমাধান এখনও হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MLA Murder TMC Mukul Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE