Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছেলে

বাবা-মায়ের গায়ে আগুন

শুক্রবার, নদিয়ার হাঁসখালিতে বাপ-ছেলের বিবাদে বাবার ছুরিতে ফালা ফালা হয়ে বাড়ির উঠোনেই ছটফট করে মারা গিয়েছিল ছেলে। পুত্রহন্তা বাবাকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, রানাঘাটে পিতৃ-হত্যার দায়ে হাতকড়া পড়ল ছেলের হাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

বয়স হয়েছে, নিজেদের শেষ সম্বল— সোনাঝুরি আর সেগুন গাছগুলি বিক্রি করে প্রায় নব্বই হাজার টাকার সংস্থান হয়েছিল বৃদ্ধ দম্পতির।

তবে, সে টাকায় নজর পড়েছিল তাঁদের ছোট ছেলের। দিতে রাজি না হওয়ায় বাবা-মা দু’জনের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল সে। হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই মারা যান বাবা। মায়ের অবস্থাও সঙ্কটজনক। পুলিশ ছোট ছেলে অবোধ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার, নদিয়ার হাঁসখালিতে বাপ-ছেলের বিবাদে বাবার ছুরিতে ফালা ফালা হয়ে বাড়ির উঠোনেই ছটফট করে মারা গিয়েছিল ছেলে। পুত্রহন্তা বাবাকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, রানাঘাটে পিতৃ-হত্যার দায়ে হাতকড়া পড়ল ছেলের হাতে।

পুলিশ জানাচ্ছে, রাবনবর গ্রামের বৈদ্যনাথ বিশ্বাস (৭২) এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতীর সংসারে চার ছেলে। বড় ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে, অন্য তিন ছেলের কেউই বাপ-মা’র সঙ্গে থাকেন না। তেমন সাহায়্যও করেন না বৃদ্ধ দম্পতিকে। পেট চালাতে তাই গাছ কাটার টাকাটা নিজেদের কাছেই রাখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বাধ সেধেছিল সেজ এবং ছোট ছেলে। তবে, টাকার ভাগ চাইলেও পুলিশ জানাচ্ছে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সেজ ভাই সুবোধ জড়িত নয়। ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি
করেছিল সে-ই।

সুবোধ বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অবোধের কাণ্ড। টাকার জন্য সে বাবা-মা’কে মারতে গিয়েছিল। বাবা শেষ হয়ে গেল, জানি না মায়ের কি হবে এখন?”

মধ্য পঞ্চাশের সরস্বতীদেবী কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাতের কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছে অবোধেরও। তাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গাছ বেচা টাকা ব্যাঙ্কে রেখেছিলেন বৈদ্যনাথবাবু। শুক্রবার রাতে বাবা-মা যখন শুয়ে ছিলেন সেই সময় ঘরে ঢুকে তাদের গায়ে পেট্রল ঢেলে নিমেষে আগুন ধরিয়ে দেয় অবোধ। বৈদ্যনাথের চিৎকারে পড়শিরা ছুটে আসেন। তাঁরাই অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় বৈদ্যনাথবাবুর। সেখানে ভর্তি রয়েছেন অবোধ।

বৈদ্যনাথের পড়শিরা অবশ্য জানান, টাকা চেয়ে বাবার উপরে প্রায়ই চোটপাট করত অবোধ। ছুতোনাতায় টাকা চাওয়াটা তার স্বভাব। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে অবোধ অবশ্য দোষ চাপিয়েছেন তার জামাইবাবুর উপরে। দাবি, তাদের সংসারে নাক গলিয়ে বাবার উপর কর্তৃত্ব ফলিয়ে সংসারে অশান্তি লাগাচ্ছেন তিনিই। যা শুনে অবোধের জামাইবাবু জয়ন্ত বলছেন, ‘‘এটাই ওর স্বভাব। কোনও কাণ্ড ঘটিয়ে ও অন্যের উপরে দোষ চাপায়।’’ এখন প্রশ্ন, বৈদ্যনাথবাবুরা পুড়লেন কী করে? অবোধের কথায়, “বাবা-মা পুড়ল কি করে তার কিছুই জানি না আমি।’’

আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান স্বপন ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি সম্পূর্ণ পারিবারিক, শুনেছি সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ওই ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE