পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হয়নি। তাতে অসন্তুষ্ট ছিলেন অভিভাবকেরা। তার পরেও বছর দশেকের ছেলে সারাক্ষণ ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য আগুনে ঘৃতাহুতি হয়েছিল। সদ্য চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠা সুমিত দাসকে বকেছিলেন মা চম্পা। অভিমানে নীরবে নিজের ঘরে ঢুকে গিয়েছিল সে। মঙ্গলবার বিকেলে সেই ঘরেরই সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমিতের দেহ উদ্ধার করা হয়। সুমিতের গলার মাফলার বাঁধা ছিল ফ্যানের সঙ্গে। নিথর দেহ নিয়ে বাড়ির লোক কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ছোটেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, সুমিত মারা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে হরিণঘাটা থানার পুলিশের অনুমান, বকুনি খেয়ে অভিমানে আত্মঘাতী হয়েছে সুমিত। কিন্তু মাত্র ১০ বছরের ছেলে এত সামান্য কারণে এমন পথ বেছে নিতে পারে, ভাবতে পারছেন না অভিভাবক এবং আত্মীয়-প্রতিবেশিরা।
হরিণঘাটা থানার ফতেপুরের বাসিন্দা সুমিত। তার এক দাদা রয়েছ। বাবা বাপ্পা দাস ইঞ্জিন ভ্যান চালায়। পড়শিরা জানাচ্ছেন, সুমিত একটু ডানপিটে স্বভাবের। সে স্থানীয় ফতেপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। দিন কয়েক আগে বার্ষিক পরীক্ষার ফল বার হয়। পরীক্ষায় সুমিত খুব ভাল ফল করতে পারেনি। তবে চতুর্থ শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পাশের হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিত ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। ফল নিয়ে চম্পাদেবী সুমিতকে বকাবকি করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর গড়িয়ে গেলেও খাওয়ার জন্য বাড়ি ফেরেনি সুমিত। সে সারাক্ষণ ঘুড়ি উড়িয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাড়ির লোক। এর পরই সে ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস লাগিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। চম্পাদেবী কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। সুমিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ চৌধুরী বলছেন, ‘‘সুমিত যে পড়াশোনার খুব খারাপ ছিল তা নয়। তবে একটু দুষ্টু ছিল। বাবা-মা তো সন্তানকে বকতেই পারেন। তার জন্য এই বয়সে সুমিত এত কঠিন সিদ্ধান্ত নিল, এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।’’
বছর কয়েক আগে এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল কল্যাণী শহরে। শহরের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তাঁর বাবা-মা ফেসবুক করতে মানা করার জন্য, সে আত্মঘাতী হয়। জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক কৌস্তভ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, চাহিদা এক এক জনের এক এক রকমের। কিন্তু সব চাহিদা যে দ্রুত মিটবে, তা নয়। তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। এখন এই অপেক্ষা করার বিষয়টিই বাচ্চারা ভুলে গিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও দেখা যায়, বাবা-মা শিশু যা চায়, তাই দেন। তাই শিশু কখনই ‘না’ শুনতে চায় না। এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, ছেলেটি ভাবতেই পারেনি ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারে তাকে কেউ নিষেধ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মাকে ভয় দেখানোর জন্যও শিশুরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
গোটা ভারতেই আত্মহত্যার ঘটনা গত কয়েক বছরে মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। যাঁরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই অল্প বয়সী। তবে, দশ বছর বা তার কম বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা এখনও সে রকম ভাবে দেখা যায় না। তাই সুমিতের ঘটনা ভাবিয়েছে সমাজবিদ থেকে শুরু করে মনোস্তাত্ত্বিকদের। তাঁরা মনে করছেন, শিশু কিশোরদের সঙ্গে অভিভাবকদেরেও বোঝাপড়ার অভাব হচ্ছে যাতে সামান্য শাসনও বরদাস্ত করতে পারছে না ছোটরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy