ঠিক সময়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে না পারলে চিরকাল চাপে পড়ত ছাত্রেরা। এখন অ-প্রস্তুত ছাত্রদের চাপে পড়ে বাড়তি পরীক্ষা নিচ্ছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত সময়ের স্নাতক পরীক্ষা ও তার ফল বেরোনর পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এ বছরই ফের ‘স্পেশাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট’ পরীক্ষা নেবে। বিএ, বিএসসি, বিকম পড়ুয়া, যাঁরা প্রথম-দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি, তাঁরা এর জন্যে আবেদন করতে পারবেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত পরীক্ষার নোটিসে লেখা হয়েছে, ‘‘যে ছাত্ররা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পূর্ণ করতে পারেনি, কিন্তু আর একটা সুযোগ দিলে করতে পারে, তাদের দাবির প্রেক্ষিতে’’ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান পাঠ্যক্রমের উপর বিশেষ পরীক্ষা নেবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদনের শেষ দিন। নোটিসে যদিও বলা হয়েছে, ‘‘কেবল এ বছরই এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে,’’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে খবর, ‘বিশেষ’ পরীক্ষা এই প্রথম নয়। পরপর কয়েক বছর পরীক্ষা নেওয়া চলছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে মোট ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনওটিতেই পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের জন্য এমন ‘বিশেষ পরীক্ষা’ নেওয়া হয় না। তা হলে কল্যাণীতেই বাড়তি পরীক্ষা কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তি, বিশেষ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে কর্মসমিতি, এবং উপাচার্যের। পরীক্ষা নিয়ামক সঞ্জীবকুমার দত্ত বলেন, ‘‘উপাচার্যের অনুমতি নিয়েই স্পেশ্যাল এগজামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার দাবি তাঁর।
কিন্তু প্রশ্ন তো সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে নয়। প্রশ্ন যুক্তি নিয়ে। যে পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি, তাদের তড়িঘড়ি পাশ করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এত তাড়া কেন? গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, কল্যাণীতে ‘রেগুলার’ পরীক্ষায় অনার্স বা জেনারেল কোর্সে পাশের যা হার, ‘স্পেশ্যাল এগজাম’-এ পাশের হার তার চেয়ে কম। অর্থাৎ যারা বিষয়টি রপ্ত করে উঠতে পারেনি, তাদের একটা বড় অংশকে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ব্যবধানে ফের পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। কেনয
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার যুক্তি, বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছিল নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের কলেজগুলিতে স্নাতক পড়ুয়াদের ‘ড্রপ আউট’ শুরু হয়েছে। তিন বছরের কোর্সে কোনও একটা বছরে পাশ করতে না পেরে কেউ মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। কারও বা পরীক্ষার আগে অসুস্থতার জন্যে বছর নষ্ট হয়েছে। এঁদের একটা সুযোগ দিতেই স্পেশ্যাল এগজাম চালু হয়।
এ যুক্তিও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন না অনেকে। স্কুলছুট আটকানো শিক্ষকদের উদ্দেশ্য হতে পারে সর্বশিক্ষার লক্ষ্য পূরণ করতে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়াশোনার মান নিশ্চিত করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জ, বলছেন অনেকে।
এসএফআইয়ের নদিয়া জেলা সভাপতি রাজীব দাস অবশ্য বলছেন, ছাত্রদের সুযোগ দেওয়ার চাইতেও, ছাত্রদের বিক্ষোভ সামাল দিতেই বাড়তি পরীক্ষা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। রাজীবের অভিযোগ, পরীক্ষার ফল নিয়ে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দুর্নীতি হয়েছে। সময়ে ফল প্রকাশ হয়নি। তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেও খাতা দেখানো হয়নি। ‘‘সে সব ক্ষতে প্রলেপ দিতেই বিশ্ববিদ্যালয় স্পেশ্যাল এগজামিনেশন নিতে চলেছে’’— বলছেন রাজীব। তবে সব দলের ছাত্র সংগঠনই বাড়তি পরীক্ষার সুযোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলিতে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমেস্টার পদ্ধতিতে পড়ানো শুরু হচ্ছে, সেখানে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে ছাত্রদের। তাতে পরীক্ষার্থীর বছর নষ্ট হয় না। তা হলে কল্যাণীতেই বা কেন ‘স্পেশ্যাল এগজাম’ হবে না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা অবশ্য এই অবস্থান নিচ্ছেন না। পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা সেমেস্টার পদ্ধতির মধ্যেই পড়ে। প্রতি বছরই ওই পরীক্ষার সুযোগ যে কোনও ছাত্র পায়। কিন্তু কল্যাণীতে স্নাতক অনুত্তীর্ণদের জন্য ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বিশেষ পরীক্ষা হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, পরের বছরেও এই পরীক্ষা হবে।’’
স্নাতক পড়ুয়ারা অবশ্য এত বিতর্কে যেতে রাজি নন। গত পাঁচ বছরে যাঁরা তিন বছরের কোর্স শেষ করতে পারেননি, তাঁরা আরও একবার পরীক্ষার জন্য কোমর বাঁধছেন। প্রতি পেপারের জন্য ৬০০ টাকা ফি দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy