নড়াচড়াটা শুরু হয়েছিল শনিবার রাতেই। জেলার মেজ-সেজ পুলিশ কর্তাদের ঘুম কেড়ে, যে ফোনটা ঘুরে ফিরে রাত পর্যন্ত আসছিল, তা খোদ পুলিশ সুপারের।
সোমবার, নবান্ন থেকে সটান উড়ে এসেছিল সার্কুলার— সতর্ক থাকুন। মঙ্গলবার দুপুরে তাই থানার বড়বাবু থেকে ডিএসপি, জেলার সব স্তরের পুলিশ কর্তাদের তলব করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তার প্রশ্নটা নিয়ে আর কোনওরকম ঢিলেঢালা মনোভাব নয়।
পড়শি জেলা নদিয়ায়, তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের পরে মুর্শিদাবাদে যে বাড়তি সতর্কতা জারি হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল না। ছিল তার মাত্রা নিয়ে। এ দিনের বৈঠকের পরে— জনপ্রতিনিধিদের রক্ষীদের হেলাফেলার ছুটি বাতিল করে জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এ জেলায় নিরাপত্তা নিয়ে যেন কোনও ফাঁক না থাকে।’’
সত্যজিতের নিরাপত্তারক্ষী যে ছুটিতে ছিলেন, দফতরে সে ব্যাপারে কিছু বলারই প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। পুলিশের এক নীচুতলার কর্মী রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘এটা খুব চালু রীতি। আমরা ছুটির দরকার হলে অনেক সময়েই সাহেবকে (জনপ্রতিনিধি) বলে ছুটি নিয়ে নিই। তার কোনও রেকর্ড অনেক সময়েই দফতরে থাকে না।’’ এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছিল। আর তারই চুড়ান্ত খেসারত দিতে হল ওই বিধায়ককে।
এ দিন পুলিশ সুপার তাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও জনপ্রতিনিধির নিরাপত্তারক্ষী ছুটি নিলে তাঁকে নিয়ম মেনেই দফতরে জানিয়ে, তাঁর বদলে অন্য নিরাপত্তারক্ষী কাজে যোগ দিলে তবেই যেন ছুটি দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের নির্দেশ মেনেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটি নিলে ‘প্রপার প্রসেস’ মেনে ছুটি নেবেন। তাঁদের এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে।’’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায় ৪০ জন জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা জেলা পুলিশের কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী পেয়ে থাকেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ৫৩ জন পুলিশকর্মীকে রোজ ওই ডিউটি করতে হয়। এঁদের মধ্যে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী পেলেও কেউ কেউ দু’জন এমনকি কেউ চার জনও নিরাপত্তারক্ষী পেয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে ডিআইবি’র (ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) রিপোর্টের ভিত্তিতেই ক’জন নিরাপত্তারক্ষী পাবেন, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেলায় ৩১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী পান। ৭ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ২ জন এবং ২ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতা চার জন করে নিরাপত্তারক্ষী পান। নিরাপত্তারক্ষীদের সকলের কাছেই রিভলভার থাকে।
তবে তা সত্ত্বেও জনপ্রতিনিধিদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা মুর্শিদাবাদে নতুন নয়। গত বছর ১০ এপ্রিল পঞ্চায়েতের ভোটপর্ব চলাকালীন রানিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ফিরোজা বেগম দৌলতাবাদের চৌদ্দ মাইলের কাছে আক্রান্ত হন। সে দিন বহরমপুর থেকে রানিনগর যাওয়ার পথে ইসলামপুরে ভৈরব সেতুর উপরে শাসকদলের লোকজন তাঁর গাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ ছিল। ২৩ এপ্রিল বহরমপুর বিডিও অফিসে দলীয় কর্মীদের নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও। ফলে নিরাপত্তার ফস্কা গেরোর প্রশ্নটা থেকেই য়াচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy