Advertisement
E-Paper

আছেন স্যার, জন্মদিনে কেক আর মিড-ডে মিলে মাংস

সরু বারান্দার টেবিলে রাখা ছোট্ট কেক। তাতে পরপর ছ’টা নাম ছোট-ছোট করে লেখা। চারপাশে সাজানো মোমবাতি। রঙিন বেলুন। টিফিনের সময়ে জনা আশি পড়ুয়া একসঙ্গে গেয়ে উঠল ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’! পিছনে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা, ‘আজ আমার জন্মদিন’। ঝকঝকে হাসি ফুটে উঠল কচি মুখগুলোয়। কেক কাটা হল। কেকের ছোট-ছোট টুকরো বিলি হয়ে গেল হাতে-হাতে।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৮
জন্মদিনে: স্যারকে কেক খাওয়াচ্ছে খুদে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

জন্মদিনে: স্যারকে কেক খাওয়াচ্ছে খুদে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সরু বারান্দার টেবিলে রাখা ছোট্ট কেক। তাতে পরপর ছ’টা নাম ছোট-ছোট করে লেখা। চারপাশে সাজানো মোমবাতি। রঙিন বেলুন।

টিফিনের সময়ে জনা আশি পড়ুয়া একসঙ্গে গেয়ে উঠল ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’! পিছনে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা, ‘আজ আমার জন্মদিন’। ঝকঝকে হাসি ফুটে উঠল কচি মুখগুলোয়। কেক কাটা হল। কেকের ছোট-ছোট টুকরো বিলি হয়ে গেল হাতে-হাতে।

যাদের ‘হ্যাপি বার্থডে’ হল তারা কেউ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, কেউ অষ্টম শ্রেণিতে। কিন্তু এদের অনেকের এই প্রথম জন্মদিন পালিত হল স্কুলে। এখানে এটাই রেওয়াজ। কাছাকাছি জন্মদিন, এমন পাঁচ-ছ’জন করে এক সঙ্গে নিয়ে এক দিন হইহই। শুধু
কেক কেটেই শেষে নয়। মিড-ডে মিলেও সকলের পাতে কয়েক টুকরো মাংস।

মুর্শিদাবাদের রানিনগরে প্রত্যন্ত গ্রাম ইসবপুর। অনেকেরই বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফোরায়। সেখানে জন্মদিন পালন মানে তো আসমানের চাঁদ হাতে পাওয়া! গরমের দুপুর ফুঁড়ে হু-হু দখিনা বাতাস বয়ে যাওয়া।

এমন দখিনা বাতাস মাঝে-মাঝেই বয় ইসবপুর জুনিয়র হাইস্কুলে। মিড-ডে মিলে এমনিতে মাংস বরাদ্দ নেই কোথাও। কিন্তু এখানে মাসে দু’এক বার হয়েই যায়। কী করে? শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল ফিক করে হাসেন, ‘‘কী করে আবার!
পকেট কেটে! জন্মদিনে কেক পেলে, দুপুরের পাতে মাংস পড়লে মুখগুলো বদলে যায়। সেটুকু দেখার জন্যই পকেট কাটি নিজের।’’

স্কুলের চারটে ক্লাসে মোট ৮২ জন ছাত্রছাত্রী। দু’টো ঘরে ভাগ করে চলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির চারটে ক্লাস। শিক্ষক একা প্রশান্ত মণ্ডল। শুধু কি পড়ানো? মিড-ডে মিল থেকে অফিসের সব ঝামেলা মেটাতে হয় তাঁকেই। কিন্তু তার পরেও স্কুলের বেশ সুনাম হয়েছে। এলাকার লোকে জানে, ওখানে পড়াশোনাও ভাল হয়। এখান থেকে বেরিয়ে হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে অসুবিধা হয় না। কেউ বলে না— কিছুই তো শেখেনি, একে কী ভর্তি নেব?

আসলে ‘একা কুম্ভ’ প্রশান্ত একটু বাড়তি খাটেন। সময়ের আগেই চলে আসেন স্কুলে, ছুটির পরেও খানিক থেকে যান। বছর তিনেক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থেকে এসে এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন প্রশান্ত। এটাই তাঁর প্রথম চাকরি। এখন এই স্কুলটাই ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছে তাঁর। অভিভাবক প্রদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, এক জনে কী পড়াবে? ছেলেমেয়েগুলো গোল্লায় যাবে। এখন দেখছি উল্টো। এখান থেকে বেরিয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হতে গেলে বলা হয়, ‘ও, প্রশান্তবাবুর ছাত্র? পরীক্ষা দিতে হবে না, সরাসরি ভর্তি হবে!’ এটাই বড় পাওয়া।’’

স্থানীয় পাহাড়পুর ইউনিয়ন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহবুব আলমের মতে, ‘‘ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মান আশপাশের আর পাঁচটা জুনিয়র হাইস্কুলের পড়ুয়াদের চেয়ে অনেকটাই বেশি।’’ হাসানপুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সরিফুল ইসলামও বলছেন একই কথা।

অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে মাসের শেষ দিকটা টানাটানি করেই চলে প্রশান্তের। কিন্তু তাতেও তিনি দিব্যি আছেন। বলেন, ‘‘ছাত্রদের আমি সন্তানের মতোই দেখি। ওদের হাসতে দেখলে ভাল লাগে। আর ওরা যখন বিনা বাধায় হাইস্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়, মনে হয় পরিশ্রমটা বিফলে যায়নি।’’

Birthday Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy