Advertisement
E-Paper

স্কুলে আসছেন মায়েরা, ছেলেমেয়ে নিচ্ছে ক্লাস

লালবাগের কুতুবপুর প্রাথমিক স্কুলে ৮ সেপ্টেম্বর, সাক্ষরতা দিবস থেকে শুরু এই উলটপুরাণ। সপ্তাহে চার দিন স্কুল ছুটির পরে দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ক্লাস।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
বয়স্ক-শিক্ষা স্কুলেই। নিজস্ব চিত্র

বয়স্ক-শিক্ষা স্কুলেই। নিজস্ব চিত্র

সহজ পাঠ শিখিয়েছিল— ছোট খোকা বলে অ আ...। ছবিটা উল্টে গিয়েছে।

ছোট খোকাখুকুরাই মাস্টারমশাই আর দিদিমনি হয়ে উঠেছে এখন। ছাত্রী তাদের মা। স্লেট-পেনসিল হাতে বাধ্য পড়ুয়া হয়ে তাঁরা এসে বসেছেন ক্লাসঘরে। বর্ণপরিচয় হচ্ছে তাঁদের।

লালবাগের কুতুবপুর প্রাথমিক স্কুলে ৮ সেপ্টেম্বর, সাক্ষরতা দিবস থেকে শুরু এই উলটপুরাণ। সপ্তাহে চার দিন স্কুল ছুটির পরে দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ক্লাস। পনেরো নিরক্ষর মাকে পড়াচ্ছে তাঁদের ছেলেমেয়েরা। কোনও পড়ুয়ার মা নন, এমন আরও ১৫ মহিলা স্লেট হাতে এসে বসছেন খুদে শিক্ষকদের কাছে। নজর রাখছেন স্কুলের শিক্ষকেরা।

এখনও মাঠে না নামলেও প্রায় একই রকম পরিকল্পনা নাকাশিপাড়ার ধর্মদা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের। ওই স্কুলে প্রায় সাড়ে চারশো পড়ুয়া আছে। জনা পঁয়তাল্লিশের মা নিরক্ষর। প্রধান শিক্ষক শ্রীবাসচন্দ্র দাস বলছেন, “আগামী সোমবার থেকে ওই নিরক্ষর মায়েদের নিয়ে স্কুলে বিশেষ ক্লাস শুরু হবে।” লালবাগের নাগিনাবাগের আয়েশা বিবি কুতুবপুরের স্কুলে এসেছেন তাঁর পাশে ছেলে, চতুর্থ শ্রেণির আব্দুল শেখের কাছে পড়তে। তিনি বলেন, “আমি তো লেখাপড়া জানি না। স্কুল থেকে পড়াবে বলায় এসেছি। ছেলের কাছে শিখতে পেরে ভালও লাগছে।” আস্তাবল কলোনির বেবি বিবিও স্কুলে এসেছেন মেয়ে, তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া জ্যোৎস্নার কাছে অ- আ লিখতে। বেবি বলেন, “ব্যাঙ্কে বা অন্য কোথাও যখন সই করতে বলে, টিপসই দিতে লজ্জা করে। এ বার সই শিখছি। আর টিপসই নয়।”

শুধু তো অন্যত্র নয়, স্কুলের বই বা পোশাক নেওয়া, এমনকী অভিভাবক বৈঠকে সই করতে হয় বাবা-মাকে। প্রতি বারই দেখা যায়, কিছু অভিভাবক টিপসই দিচ্ছেন। আর তা দেখেই তাঁদের সাক্ষর করার কথা ভাবতে শুরু করে কুতুবপুর প্রাথমিক স্কুল। নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহে পড়ুয়ারা এলাকায় ঘুরে সমীক্ষা করে। সঙ্গে ছিলেন শিক্ষকেরা। দেখা যায়, ১৫ জন পড়ুয়ার মা এবং আরও ১৫ জন মহিলা নিরক্ষর। তাঁদের বেছে নেওয়া হয় সাক্ষরতা অভিযানের জন্য। ঠিক করা হয়, আগামী ১৪ নভেম্বর, শিশু দিবসের আগেই তাঁদের সাক্ষর করতে হবে। শিশু দিবসে তাঁদের মঞ্চে তুলে সাক্ষর হওয়ার গল্প শোনানো হবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহামুদাল হাসান বলছেন, “স্বাক্ষর করতে জানা, দৈনন্দিন জীবনে ছোট-ছোট অঙ্কের হিসেব করতে জানা এবং ছোট বাক্য লিখতে-পড়তে জানা— এই তিনটি বিষয় শেখানোর চেষ্টা করছি আমরা।”

শুধু মহিলাদের কেন? প্রধান শিক্ষক জানান পরে পুরুষদেরও সাক্ষর করতে নামবেন তাঁরা। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি দেবাশিস বৈশ্য বলছেন, “ওই স্কুল ভাল কাজ করছে। অন্য স্কুলও এগিয়ে এলে এলাকার ছবিটাই পাল্টে যাবে।”

Students Guardian Class
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy