Advertisement
E-Paper

মনের কথা শুনছে স্কুল

দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আবার দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যেতে লজ্জা পায়। বাড়ির কাউকে দিয়েও ন্যাপকিন আনাতে পারে না। বন্ধুদের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে ন্যাপকিন সংগ্রহ করে সে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৫
পড়ুয়াদের মনখারাপের চিঠি জমা পড়ছে এই বাক্সে। নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের মনখারাপের চিঠি জমা পড়ছে এই বাক্সে। নিজস্ব চিত্র

কয়েক জন সহপাঠী তাকে ‘মেয়েলি’ বলে খেপায়। ক্লাসে তার স্কুলব্যাগ নিয়ে গিয়ে রেখে দেয় ছাত্রীদের বেঞ্চে। টিটকিরি দেয়, নানা কটূ মন্তব্যও করে।

এত দিন বাড়ির বা স্কুলের কাউকে এ সব জানাতে পারেনি নবম শ্রেণির ছাত্রটি। মনের দুঃখ মনেই চেপে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত দিন দুই আগে চিঠি লিখে স্কুলের ‘মনের কথা’ বাক্সে ফেলে দেয় ছেলেটি। বাক্স থেকে সেই চিঠি পেয়ে প্রধান শিক্ষক জানতে পারেন বিষয়টা। যারা ছাত্রটিকে বিব্রত করছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে সমঝে দেবেন বলে তিনি ঠিক করেছেন।

দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আবার দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যেতে লজ্জা পায়। বাড়ির কাউকে দিয়েও ন্যাপকিন আনাতে পারে না। বন্ধুদের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে ন্যাপকিন সংগ্রহ করে সে। এ কথা পরিবারের কাউকে সে বলতে পারেনি। কিন্তু তা লিখে ‘মনের কথা’ বাক্সে ফেলেছিল সে। তার আর্জি, স্কুলে যাতে একটা ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়, যাতে প্রয়োজনে সে স্কুল থেকেই ন্যাপকিন পেতে পারে।

ছাত্রছাত্রীদের মনের কথা জানতে গত অক্টোবরে এই বাক্স বসিয়েছে বহরমপুর সদর ব্লকের হিকমপুর হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষকের ঘরের পাশে রয়েছে সেই ‘মনের কথা’ বাক্স। বাক্স খুলে চিঠি বের করতে পারেন এক মাত্র তিনিই। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়ারা বহু কথাই সরাসরি বাড়ির লোকেদের বা আমাদের জানাতে পারে না। তাই এই উদ্যোগ।” তিনি জানান, যারা বাক্সে চিঠি ফেলে, তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। কিন্তু দরকার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ছাত্রীর আর্জি মতো স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানোর ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বয়ঃসন্ধিকালীন হরেক সমস্যায়, অভিমানে, অবসাদে যখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কেউ-কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে বা মনে-শরীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তখন এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। প্রধান শিক্ষক জানান, ‘মনের কথা’ বাক্সে চিঠি ফেলা ছাত্রছাত্রীদের কারও প্রয়োজন হলে মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া বা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও ভেবে রেখেছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত জনা দশেক পড়ুয়া বাক্সে চিঠি ফেলেছে। তার প্রায় সবেই নজর দেওয়া হয়েছে, সুরাহাও হয়েছে বলে স্কুল সূত্রের খবর।

স্কুলের সহ-শিক্ষক নাজমুল হক জানান, গত বছর ‘মনের কথা’ চালুর পরেই স্কুলে পরীক্ষা এসে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনেকটা সাড়া মেলে। এ বার নতুন শিক্ষাবর্ষে আরও বেশি সংখ্যক পড়ুয়া তাদের সমস্যার কথা জানাবে বলে তাঁদের আশা।

হিকমপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া রমজান শেখ কিংবা একাদশ শ্রেণির আরিফা খাতুনেরা বলছে, অনেক কথাই বড়দের বলা যায় না। নিজের মনে চেপে রাখাটাও যন্ত্রণার। ‘মনের কথা’ বাক্স তাদের সামনে একটা জানলা খুলে দিয়েছে।

এখন আর বিরল প্রান্তরে নিমের কোটরের সামনে গিয়ে কাউকে বলতে হবে না— ‘শোনো গাছ, শোনো, আমার বড্ড মনখারাপ জানো!’

Letter Box School Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy