Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Russia Ukraine War

Ukraine crisis: সাইরেন শুনলেই বেসমেন্ট ভরসা

বলই মনে হচ্ছে, আর কি বাড়ি ফেরা হবে? দেখা হবে মায়ের সঙ্গে? কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে জোর রাখতে হবে।

একটু ধাতস্ত হওয়ার পর বুঝলাম, যুদ্ধটা লেগেই গেল।

একটু ধাতস্ত হওয়ার পর বুঝলাম, যুদ্ধটা লেগেই গেল। ফাইল চিত্র।

উষ্ণীষ রায়, ডাক্তারি পড়ুয়া
খারকিভ শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৫
Share: Save:

ভোর তখন প্রায় ৪টে বাজে। বোমার শব্দে বিছানা থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসি। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটু ধাতস্ত হওয়ার পর বুঝলাম, যুদ্ধটা লেগেই গেল। রাশিয়া আক্রমণ করেই ফেলল।

একের পর এক বোমার শব্দে আমাদের বহুতলটা কেঁপে উঠছে। সেই সঙ্গে কাঁপছে বুকও। কেবলই মনে হচ্ছে, আর কি বাড়ি ফেরা হবে? দেখা হবে মায়ের সঙ্গে? কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে জোর রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যেরাও জেগে উঠেছে। আবাসনের মালিক এসে বেসমেন্টে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আমরা তল্পিতলপা গুটিয়ে নেমে গেলাম।

আমরা থাকি রুশ সীমান্ত ঘেঁষা খারকিভ শহরের মাঝামাঝি। এখানে এখনও বোমা না পড়লেও আশপাশে বিশেষ করে শহরের প্রান্তে মিসাইল হানায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। পাশের বহুতলে আমাদের দুই সহপাঠী থাকে, তাতেও মিসাইল আঘাত করেছে। আমাদের কাছে ওরা আশ্রয় নিয়েছে। পাঁচ জনের রসদ মজুত ছিল। দু’জন বেড়ে যাওয়ায় তাতে টান পড়ছে। যা খাবার আছে তাতে টেনেটুনে আর দু’দিন চলবে। তার পর কী হবে জানি না।

আমি খারকিভ মেডিক্যাল ইউনিভারসিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। শহরটা রাশিয়া সীমান্ত থেকে বড় জোর ২০ কিলোমিটার। শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইউক্রেনের সেনা শিবির। সেখানেও বিস্ফোরণের শব্দ। শহরের ভিতরে যুদ্ধবিমানের জন্য যে তেলের ট্যাঙ্কার ছিল, সেটা মিসাইল হানায় উড়ে গিয়েছে। দাউ দাউ করে জ্বলছিল সেই আগুন।

রাশিয়ানরা এমনিতে জনবসতির উপরে হামলা করছে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেনা শিবিরের পাশের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আছড়ে পড়ছে বোমা, মিসাইল। অহরহ সাইরেন বাজছে। সাইরেনের শব্দ শুনলেই ঢুকে পড়তে হচ্ছে বেসমেন্টে। তবে এখানে সব বাড়ি-আবাসনের নীচে বেসমেন্ট নেই। বিশেষ করে নতুন বাড়ি বা আবাসনে। যাদের নেই তারা মেট্রো স্টেশনগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেখানেই বা কত জনের থাকার জায়গা আছে? অনেকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

আমাদের সহপাঠীদের এরটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেখানে স্থানীয় বন্ধুরাও আছে। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকে। সেই গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত খবর পাচ্ছি। সকলেই প্রচণ্ড আতঙ্কে আছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। গোটা শহর ধমথমে। রাস্তা ফাঁকা। আমাদের ঘরটা একতলায়। আমরা তাই মাঝে-মধ্যে বেসমেন্ট থেকে উঠে রান্না বসিয়ে আসছি, স্নান করে আসছি। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি না।

আমি কৃষ্ণনগরের ছেলে, বাড়ি রায়পাড়ায়। এই পরিস্থিতি কল্পনাও করতে পারি না। জানি না, কবে এই আতঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পাব। খুব বাড়ির কথা মনে পড়ছে।

(অনুলিখন: সুস্মিত হালদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Ukraine Nadia Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE