মাস খানেক আগের কথা। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগে যায় মধ্যবাজারের একটি বাড়িতে। ক্ষতি হয়েছিল, তবে বড়সড় নয়। স্থানীয় মানুষের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সে দিনের কথা আজও মনে আছে বাসিন্দাদের। আতঙ্ক, প্রাণভয়ে মানুষের ছোটাছুটি, ‘জল আন’ বলে চিৎকার... সবই আজও কানে ভাসে। কিন্তু তার পরও বাজারের ঘিঞ্জি ছবিটা বদলায়নি। আজও দোকানের সামনে পা ফেলার জায়গা নেই। সব্জি-আনাজের ঝুড়ি থেকে বড় বড় বস্তা, উঠে এসেছে রাস্তায়। ফলে গাড়িঘোড়া দূরে থাক, হাঁটার জায়গা পর্যন্ত মেলে না। এরই মধ্যে মাথার উপরে ত্রিপলের ছাউনির দড়িটা রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গিয়েছে। আর যেখানে হাঁটার জায়গা নেই, সেখানে আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন কী ভাবে ঢুকবে, প্রশ্ন করাটাই বৃথা।
তবু জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে প্রচুর মানুষ ছুটে আসেন। ফলে বড় কিছু ঘটতেই পারে না।’’ তা হলে বাজারে ভয়ের কিচ্ছু নেই? আগুন নেভানোর জন্য লোকবলই যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে অবশ্য আফাজুদ্দিন পরে বলেন, ‘‘ডোমকল বাজার এখন অনেক বড় হয়েছে। ফলে এ সময়ে বিপদ হলে, তা বড় আকার নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমানও ব্যাপক হবে।’’ আর সেটা শুধু মধ্যবাজারই নয়, মিনি বাজার, সোনাপট্টি বাজারেও হবে। বেড়ে চলা দোকানের সংখ্যা ও অব্যবস্থায় সবই যে ক্রমশ হয়ে উঠেছে এক-একটা জতুগৃহ।
কী বলছেন ব্যবসায়ীরা? তাঁদের দাবি, এলাকায় রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। তার উপর সব্জিপাতি নিয়ে বসে পড়েন দোকানিরা। সপ্তাহে হাটের দিন দু’টো ওই বাজারে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া, কিছুই করার থাকবে না।
এ সব শুনে চুপ করে থাকতে পারেননি রাস্তার উপর বাজার নিয়ে বসা দোকানিরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা এই চত্ত্বরে বসার জন্য নিয়মিত পঞ্চায়েতকে পয়সা দেন। অথচ তাঁদের জন্য আলাদা বাজার তৈরির কথা থাকলেও, এ পর্যন্ত সেই বাজার তৈরি কার হয়নি। তাই এক রকম বাধ্য হয়েই তাঁরা পথে বসেছে।
ওই এলাকার ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু সাহার দাবি, ‘‘আমাদের ভাগ্য ভাল এই এলাকায় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। যা অবস্থা, তাতে আগুন লাগলে গোটা এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও কিছুই করার থাকবে না। দমকল পৌঁছলেও ৫০০ মিটার বা তার কিছুটা দূরেই আটকে যাবে।’’
এ দিকে গরমে নদী শুকিয়ে কাঠ। বাজারের পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে ইমারত। ফলে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দমকলের জল পাওয়াও কঠিন হবে।
তবে নানা মহলে প্রশ্ন উঠলেও এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারেনি কেউ। পঞ্চায়েতের দাবি তারা এখন নিধিরাম সর্দার। পুরসভা হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের আর কোনও ক্ষমতা নেই। অন্য দিকে পুরসভা গঠিত হলেও তার মাথা নেই। প্রশাসনের কর্তারা কোনও মতে ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
কী বলছে দমকল?
দমকলই নেই ডোমকলে।
ভৈরবের পাড়ে ১৬ বছর আগে মহকুমা গঠিত হলেও আজও দমকল নেই ডোমকলে। বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও চলেছে। শেষে মাস ছয়েক আগে কলকাতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডোমকলের দমকল কেন্দ্রের শিলান্যাসও করেন। টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। জায়গাও ঠিক হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ভোটের পর কাজ শুরু হবে। তাই আগুন লাগলে আপাতত ভরসা বহরমপুর বা করিমপুরের দমকল।
ডোমকলের বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভা না হওয়ায় ডোমকল শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিল পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির হাতে। মূলত তাদের দৌলতেই শহরের অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে অবৈধ নির্মান। যা এই সময়ে প্রশাসনের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, মূলত রাজনৈতিক দলগুলির মদতেই শহরের অলিগলি ছেড়ে খোদ রাজ্য সড়কে উঠে এসেছে দোকান। এবং সেই সংখ্যাটা এমনই যে পরবর্তী কালে দোকান তুলতে গেলে বড় বাধার মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকে। এমনকী নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা বাজারগুলিও তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে। কোথাও কোথাও রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে বাড়ির একতলার ছাদ। শহরের ভাতশালা এলাকা থেকে আসার পথে মধ্যবাজারে প্রবেশ করতে গেলেই যেমন বাধার সামনে পড়তে হয় মানুষকে। সরু ওই গলিতে সাইকেল, মোটরবাইক ছাড়া আর কিছুই ঢুকতে পারে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ একটা সময় বড় রাস্তা ছিল ওই এলাকায়।
ডোমকলের মহকুমা শাসক তাহিরুজ্জামান বলেন, ‘‘নিবার্চন প্রক্রিয়া মিটলে সকলকে নিয়ে গোটা বিষয়টি অলোচনা করব আমরা।’’