Advertisement
১৮ মে ২০২৪
ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায়

এক বেলা দুধ কেনার সিদ্ধান্তে সঙ্কটে নবাবি দেশের চাষিরা

চাহিদা কম। তাই মুশিদাবাদের ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় জেলার চাষিদের জানিয়েছে, তারা সকাল-বিকেল দুধ নিতে পারবে না। কারণ বাজারে দুধের চাহিদা কম। সরকারপোষিত দুগ্ধ সংস্থাগুলি বেশি দুধ নিতে চাইছে না। ফলে চাষিদের কাছ থেকে একবেলা দুধ কেনা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

চাহিদা কম। তাই মুশিদাবাদের ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় জেলার চাষিদের জানিয়েছে, তারা সকাল-বিকেল দুধ নিতে পারবে না। কারণ বাজারে দুধের চাহিদা কম। সরকারপোষিত দুগ্ধ সংস্থাগুলি বেশি দুধ নিতে চাইছে না। ফলে চাষিদের কাছ থেকে একবেলা দুধ কেনা হবে। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে জেলার দুগ্ধ কারবারের সঙ্গে জড়িত ছোট মাপের সমিতিগুলির। তারা ভেবে পাচ্ছে না, উদ্বৃত্ত দুধ কী করবেন? শেষমেশ কী বিক্রি করতে না পেরে পিচ রাস্তায় ফেলে দিতে হবে দুধ!

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায়ের তরফে চাষিদের দ্বারা পরিচালিত সমিতিগুলিকে চিঠি ধরিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘এখন থেকে কেবলমাত্র একবেলার দুধ নেওয়া হবে। আপাতত ১ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চাষিদের কাছ থেকে সন্ধ্যায় দুধ কেনা হবে না।’’ এই নির্দেশ জেলার ৪৫০টি দুগ্ধ উৎপাদক সমিতিকেই জানানো হয়েছে। সমিতিগুলির অভিযোগ, কেবল তাই নয়ই। তাদের এখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার দশা। কারণ, ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় দুধের দাম লিটার প্রতি একটাকা করে কমানো হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছে।

আচমকা চাষির স্বার্থ বিরোধী জোড়া সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায়ের দাবি, এই সময় বেশি দুধ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে জেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সমিতিগুলি তাদের কাছে বেশি করে দুধ পাঠাচ্ছে। কিন্তু সেই বাড়তি দুধ বেচার কোনও বাজার তাদের নেই। প্রতিদিন সমবায় সমিতিগুলির কাছ থেকে গড়ে‌ ৪৭ হাজার লিটার দুধ কেনা হয়। কিন্তু মিল্ক ফেডারেশন তাদের কাছ থেকে মাত্র ১৩ হাজার লিটার দুধ নিচ্ছে। ফলে বাকি দুধ মজুত করে রাখতে হচ্ছে। তাই আপাতত দিন তিনেকের জন্য একবেলা দুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ দুগ্ধ চাষিরা। তাঁদের দাবি, বিক্রি না হওয়ার ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে দুধ নষ্ট হবে। বহরমপুরের চর হালালপুরের চাষি সমর ঘোষের দাবি, ‘‘একে বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা সামালোর চেষ্টা করছি। আরহ তারই মধ্যে মাত্র এক বেলা দুধ কেনা হবে বলে ভাগীরথীর তরফে জানানো হল। অন্য বেলার দুধ কোথায় বেচব, বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানান, এই খরার মরসুমে এলাকায় কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান নেই। ফলে দুধের চাহিদাও কম। তাই দুধ বেচার তাঁদের কাছে বিকল্প কোনও বাজার নেই।’’ একই দাবি রানিতলার তেঁতুলিয়া এলাকার চাষি নিতাই ঘোষের। তিনি জানান, দুধ একবেলার বেশি ধরে রাখা যায় না। রাখলেই ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে দুধ টক হয়ে যায়। আর তাঁদের কাছে দুধ বেচার একমাত্র আধার হল ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতি। একবেলার পুরো দুধটাই মনে হচ্ছে নষ্ট হবে। ভাগীরথী দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্ঘে যুগ্ম সমপাদক পীযুষ ঘোষ বলেন, ‘‘এর ফলে চাষিরা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়বেন। আবার ভাগীরথীও অতিরিক্ত দুধ বেচতে পারছে না। ফলে এই সিদ্ধান্ত।’’ ‘ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভলপমেন্ট বোর্ড’-এর সহায়তায় ছোট-খাটো সমিতিগুলি বেঁচে থাকে। সমিতির অধীনস্থ চাষিরা ভাগীরথীতে দুধ বিক্রি করলে লিটার পিছু খানিকটা বেশিই দাম পান। কিন্তু দুধ বিক্রি না হলে চাষিদের ভাতে মরার দশা হবে।

চাষিদের অভিযোগ, মিল্ক ফেডারেশন ও ভাগীরথীর মধ্যে চাপানউতোরের ফলে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। খামারপাড়া দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির সম্পাদক সুখেন ঘোষ জানান, এমনটা চলতে থাকলে সমিতিগুলি বন্ধ হয়ে পড়বে।

ভাগীরথীর তরফে অবশ্য জানানো হচ্ছে, কলকাতার বাজারে অবিক্রিত দুধ দিয়ে দই-লস্যি-ঘি বানিয়েও কয়েক হাজার লিটার দুধ উদ্বৃত্ত থাকছে। ফলে তাদের পক্ষে কোনওভাবেই দু’বেলা দুধ কেনা সম্ভব নয়। রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান পরশ দত্তের দাবি, ‘‘সঙ্কটের মরসুমে ভাগীরথী অতিরিক্ত দুধ দেয় না। এখন চাহিদা কম। আর এখনই অতিরিক্ত দুধ দিতে চাইছে। ফলে আমরা ওদের পুরো দুধ নিতে পারব না।’’ তবে এ সব তরজার মধ্যে বার বার বিঘ্নিত হচ্ছে চাষিদের স্বার্থ। মাস দশেক আগেও এই ভাবে চিঠি দিয়ে দুধ কেনা সঙ্কুচিত করেছিল ভাগীরথী। বার বার এমনটা ঘটতে থাকলে চাষিদের আর্থিক হাল তলানিতে ঠেকবে। এমনটাই দাবি গ্রামীণ দুগ্ধ সমবায়গুলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

milk farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE