গঙ্গার উপর ফরাক্কার নির্মীয়মাণ নতুন চার লেনের সেতুটি চালু হবে আগামী ৩১ জুলাই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জাতীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী লোকসভার অধিবেশনে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণা করেছেন। রাজ্যের এক সাংসদের প্রশ্নের জবাবে গডকড়ীর এই ঘোষণায় মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে
স্বস্তি ফিরেছে।
ওইদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, ৫,৪৬৮ কিলোমিটার এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত ৮৩.৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চার লেনের এই সেতু নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছিল ৫২১.১৯ কোটি টাকা। ফরাক্কার প্রাক্তন বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “চার লেনের এই নতুন সেতু যানজটের দুর্ভোগ থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে। ফরাক্কা বাঁধের নিরাপত্তাও অনেকটাই সুরক্ষিত হবে। ৩১ জুলাই সেতুর কাজ শেষ হলে তা খুশির খবর সকলের কাছেই।” জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানও বলেন, “২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল ফরাক্কার দ্বিতীয় সেতু তৈরির কাজ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। ফরাক্কার বর্তমান সেতুটি দু’লেনের। অথচ সেতুর দু’দিকেই চার লেনের সড়ক। ফলে যানজট হয়।’’ তিনি জানান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আশ্বাস মতো জুলাই মাসের মধ্যে যদি এটি চালু হয়, তবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। ফরাক্কার বর্তমান দু’লেনের সেতুটি কার্যত ফরাক্কা ব্যারাজে গঙ্গার জলের রিজ়ার্ভার ও যান চলাচলের সেতু হিসেবে কাজ করছে। অত্যধিক যান চলাচলের চাপে তার লকগেটগুলি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে সেতুটিরও। তাই ২০১৬ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ফরাক্কার ডাউনস্ট্রিমের ৫০০ মিটার দূরে গঙ্গার উপর চার লেনের নতুন সেতু তৈরির ছাড়পত্র দেয়। চার লেনের এই সেতুটির অ্যাপ্রোচ রোড-সহ দৈর্ঘ্য হবে ৫.৪৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে মূল সেতুর অংশ ২.৫৮ কিমি। বাকি অংশ দু’ধারের সংযোগ সড়ক। প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয় ৫২১ কোটি টাকা। সেতুতে সব মিলিয়ে ৮৪টি স্তম্ভ রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের একটি সংস্থা সেতুর কাজের দায়িত্বে রয়েছে একটি চিনা সংস্থার সহযোগী হিসেবে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, যখন বর্তমান ফরাক্কা সেতু চালু হয় তখন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ছিল দুই লেনের। যানবাহন চলাচলের সংখ্যাও ছিল প্রতিদিন হাজার তিনেক। এখন সেই জাতীয় সড়কে যানবাহনের সংখ্যা চার গুণ বেড়ে ১২ হাজার পেরিয়েছে। চার লেনের সড়কও তৈরি হয়েছে। যানজটে নাজেহাল অবস্থা।’’
নির্মাণের সময়সীমা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেতুর খরচের অঙ্কও অনেকটাই বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ফরাক্কার দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে ৫২১ কোটির জায়গায় ৬২২.০৪ কোটি টাকা খরচ হবে। চার লেনের এই সেতুটি চওড়ায় হবে ২৫ মিটার অর্থাৎ ৮২ ফুট। লম্বায় ৫.৪৬৮ কিমি (১৭,৯৪০ ফুট)। ফরাক্কার এই সেতু চালু হলে এটি হবে জলভাগের উপরে নির্মিত রাজ্যের দীর্ঘতম সেতু। নির্মাণকারী সংস্থাকে সেতুটি নির্মাণের জন্য তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেতুতে দু’টি দুর্ঘটনা এবং অতিমারির জেরে নির্মাণ কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)