Advertisement
E-Paper

দলের মদতেই হাসপাতালে আয়ারাজ

সবুজ পাড়-সাদা শাড়ির আয়ারা আবার কংগ্রেসের। সেই প্রমাণ অবশ্য খোদ কংগ্রেসই দিয়েছে গত মার্চে। ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া পুরাতন হাসপাতাল বা সদর হাসপাতাল নামে পরিচিত শহরের প্রাচীনতম হাসপাতালটি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি শাখা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৫
সবুজ পাড় আয়া।—নিজস্ব চিত্র।

সবুজ পাড় আয়া।—নিজস্ব চিত্র।

কারও পরনে নীল পাড় সাদা শাড়ি। কারও সবুজ পাড় সাদা শাড়ি। কারও সে সবের বালাই নেই, যে কোনও রকম ছাপা শাড়ি।

কে কোন দল, কে বা নির্দল— শাড়ি দিয়েই যায় চেনা।

এঁরা সবাই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আয়া। এঁরা দাপিয়ে বেড়ান হাসপাতালের এক তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সব ওয়ার্ডেই। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। ভর্তি থাকা রোগীরা পাশাপাশি বিছানায় ফিসফিস করেন। পুরনো রোগী নতুন রোগীকে বলেন, ‘‘সাবধান! ওই নীল-সাদা আয়াদের সমঝে চলবেন। ওরা তৃণমূল।’’ পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সেটা কী করে বুঝলেন?’’ ফিসফিসিয়ে উত্তর, ‘‘ওই শাড়ি দেখেও বুঝছেন না!’’

এ সব কথায় অবশ্য পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা মুখপাত্র অশোক দাস। তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূলের কোনও আয়া নেই। এ সব অপপ্রচার মাত্র।’’

ছাপা শাড়ির আয়া।

সবুজ পাড়-সাদা শাড়ির আয়ারা আবার কংগ্রেসের। সেই প্রমাণ অবশ্য খোদ কংগ্রেসই দিয়েছে গত মার্চে। ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া পুরাতন হাসপাতাল বা সদর হাসপাতাল নামে পরিচিত শহরের প্রাচীনতম হাসপাতালটি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি শাখা। সেই পুরনো হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া নবনির্মিত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বছর দুয়েক আগে। পুরনো হাসপাতালে রয়ে গিয়েছে শুধু দোতলা ‘মাতৃসদন’। তাও স্থানান্তরিত হবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে নবনির্মিত ‘মাতৃ-মা’ বিভাগে। সেখানে আয়াদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

তা হলে, মাতৃসদনের আয়াদের ভবিষ্যত কি? তাঁদের পুনর্বাসনের দাবিতে গত মার্চে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ের সামনে ম্যারাপ বেঁধে অবস্থান করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন এক দল সবুজ পাড়-সাদা শাড়ির আয়া। গোটা বহরমপুর জানে, সবুজ পাড়-সাদা শাড়ির আয়া মানেই কংগ্রেস। তবুও বহরমপুর টাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ বলেন, ‘‘আয়াদের নিয়ে কংগ্রেসের কোনও শাখা সংগঠন নেই। গরিব মানুষগুলোর কাজ চলে গেলে তাঁদের পরিবার না খেয়ে মরবে। তাই তাঁদের পুনর্বাসনের দাবি তোলা হয়েছে।’’

নীল পাড়া আয়া।

নীল পাড় সাদা ও সবুজ পাড় সাদা শাড়ির আয়াদের বিরুদ্ধে দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তুলছেন ২৫-৩০ বছর ধরে পরিষেবা দেওয়া ছাপাশাড়ির নির্দল আয়ারা। তাঁদের আক্ষেপ, দুই দলের আয়ার দাপটে নিরপেক্ষদের অবস্থা কাহিল। সরকারি নিয়ম মেনে চললে কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কোনও আয়া থাকার কথা নয় বলেই জানাচ্ছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস। ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ টাকা গুনেও পরিষেবা না পাওয়ায় ‘আয়া-রাজ হটাও’ বলে গত ৩ অগস্ট রোগীর বাড়ির লোকজন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পথ অবরোধ করেছিলেন। তবুও কেন আয়া-রাজ চলছে
বহাল তবিয়তে?

মেডিক্যাল কলেজের এক কর্তার কথা: ‘‘আয়া রাখতে কত মহল থেকে কত চাপ আছে, সেই খোঁজ নিন!’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘মানুষ একজোট হয়ে চাইলে আয়ারাজ উঠবে।
নচেৎ নয়।’’

Hospital Medical Nursemaid মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy