Advertisement
E-Paper

খেটো বাঁশের খান পাঁচেক ঘায়ে থামিয়ে দিয়েছিল কান্না!

থামিয়ে দিয়েছিল তার শীতকাতুরে কষ্ট, তার অসহায়তা, সব। তার পর খুব ঘন ঘুম বুঝি নেমেছিল গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৩

সে রাতে চাঁদ ছিল না, শীত ছিল বেশ, সে ডাকছিল।

সে ডাকে মায়া ছিল না, কান্না ছিল হয়তো, ছিল কিছু অসহনীয়তা। তা বলে অমন ডাকতে হবে?

পাড়ার লোক শালমুড়ি দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল, খাবার দেওয়ার ছলে, কান্না ভোলানোর অছিলায় তাকে কাছে ডেকে তার পরে, খেটো বাঁশের খান পাঁচেক ঘায়ে থামিয়ে দিয়েছিল কান্না। থামিয়ে দিয়েছিল তার শীতকাতুরে কষ্ট, তার অসহায়তা, সব। তার পর খুব ঘন ঘুম বুঝি নেমেছিল গ্রামে।

এমন কান্না স্তব্ধ করা রাতের অন্য একটা কাহিনিও তো আছে। শীত-কুয়াশায় আকাশ বড় অস্পষ্ট, চাঁদ তেমন দেখা যায় না। শুধু হিমেল এক জ্যোৎস্না কুয়াশার পর্দা চুঁইয়ে গলে যেতে থাকে, চরাচর জুড়ে, হয়ত সে রাতে অবাক লেগেছিল তার ভারী! হয়ত সে রাতেও কষ্ট হয়েছিল তার। তাই ঊর্ধ্বমুখ বোবা কান্নায় ভাসিয়েছিল সে। যা শুনে, সেই হিম রাতে তাঁর করুণ উপন্যাসের লাইন ক’টা খসখস করে লিখে ফেলেছিলেন তিনি।

তা, কোথায় রানিনগরের কাঁটাতারের বেড়ার আড়ালে গ্রাম আর কোন সুদূরে তাইগার রুশ প্রান্তর। হয়ত তাই কুকুর-কাঁদলে কোথাও হাতে উঠে আসে খেটো বাঁশ কোথাও আর্কাদি গাইদার খসখস করে লেখেন ‘চুক আর গেক’।

আরও পড়ুন: হুঁশ ফেরে না হাসপাতালের

শুধু কি কান্না, কখনও তো নিছকই মজা করেও, তাকে পিটিয়ে, থেঁতলে, ছুড়ে ফেলে কী মজা কী মজা! ল্যাটা চুকলো মনোভাব নিয়ে দিব্যি আছে তাদের পড়শিরাও। নিতান্তই সাধারণের কুকুর নিধনের এমন অসাধারণ সৎসাহস দেখে তাই মনে হচ্ছে, আমরা সুস্থ আছি তো!

সদ্য চোখ ফোটা, আলুথালু, পৃথিবীর সঙ্গে দিন কয়েকের সদ্য পরিচয় হওয়া সারমেয় শাবককে পিটিয়ে মারার সমালোচনা করলে যাঁরা রে রে করে ওঠেন, সেই তালিকায় তো তাঁরাও রয়েছেন, যাঁদের হাতে আমরা সুস্থ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে থাকি!

শহর কলকাতা নয়, সেই ‘অসুস্থতা’র ছায়া ছড়িয়ে রয়েছে জেলার প্রান্তরেও। বাঁশ পিটিয়ে, চলন্ত গাড়ির নীচে ফেলে আমাদের ভেতরের ‘ঘাতক মন’টাকে টেনে হিঁচড়ে সামনে আনার ঘটনা মুর্শিদাবাদেও কি কম? উপরি রয়েছে, গায়ে গরম জল ঢেলে দমকা হাসিতে ফেটে পড়া কিংবা লেজের নীচে স্পিরিট ছড়িয়ে কিংবা পটকা বেঁধে তার অসহায় মুহূর্তটা চেটেপুটে উপভোগ করার ঘটনাও কি কম!

অক্টোবর আর নভেম্বর জুড়ে শুধু বহরমপুর থানায়, পথ-কুকুরের উপর অত্যাচার করারই তিন তিনটে মামলা ঝুলে রয়েছে। মামলার সাত অভিযুক্ত আদালতের নির্দেশে এখন জামিনে।

আর একটু পিছনে যদি তাকাই— রান্না ঘরে ঢোকার অপরাধে তার সামনের পা’টাই কেটে দিয়ে এক হোমগার্ড সর্দপে বলেছিলেন, ‘‘তা এতে দোষের কী আছে!’’ বছর চারেক আগে, গাড়ির তলায় তার ‘পুষ্যি’টাকে ছুড়ে দিয়ে খাগড়ার সেই মানুষটিই তো বলেছিলেন, ‘‘কী করব, খুব জ্বালাচ্ছিল!’’

এই সৎ-সাহসটা জন্মে গেল কেন? খুব গায়ে গা ঘেঁষে থাকতে চায় বলে, রাত পাহারায় তার জুড়ি নেই বলে, খিদে পেলে কেঁদে ফেলে বলে?

কেউ একটু বলবেন, কেন?

Dog Puppies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy