Advertisement
E-Paper

কাজ ছেড়ে স্কুলে ফিরল শিল্পারা

চতুর্থ শ্রেণির পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় দুজনেই। মা ওলো বিবি বলছেন, “অভাবের সংসার। তাই সংসার চালাতে বিড়ি বাঁধার কাজে লাগার পর থেকে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০১:৪৩
স্কুলে ফেরার পরে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে ফেরার পরে। নিজস্ব চিত্র

স্কুল ছেড়ে কেউ বাঁধছিল বিড়ি। কেউ আবার বেছে নিয়েছিল দিনমজুরের কাজ। এমনই ন’জন পড়ুয়া নতুন করে স্কুলে ফিরল। বৃহস্পতিবার সুতির তিন স্কুলছুট ছাত্রী ও ছ’জন ছাত্রকে ভর্তি করানো হল রঘুনাথপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে।

২০০৩ সাল থেকে রঘুনাথপুর গ্রামেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র চলছে। ছাত্র সংখ্যা এখন ১৮৬। রয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, বাজিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকা। তার মধ্যে পুড়াপাড়া, রঘুনাথপুর গ্রাম আরও পিছিয়ে। সেখানে স্কুলছুট, বাল্যবিবাহ বড় সমস্যা। তার বড় কারণ অর্থনৈতিক। প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে স্কুলছুট ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা এসেছিলেন স্কুলে। ওই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি তাদের স্কুলে ভর্তির আগ্রহ আছে। নতুন করে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হোক চাইছিলেন অভিভাবকেরাও। তাই পঞ্চম শ্রেণিতে সাতজন এবং দু’জন সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। পাঠ্যবইও দেওয়া হয়েছে।”

যমজ বোন অহেদা খাতুন ও রুমা খাতুন। চতুর্থ শ্রেণির পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় দুজনেই। মা ওলো বিবি বলছেন, “অভাবের সংসার। তাই সংসার চালাতে বিড়ি বাঁধার কাজে লাগার পর থেকে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এখনম ওরা নতুন করে পড়তে চাইছে। তাই ভর্তি করে দিলাম সপ্তম শ্রেণিতে।”

গোপালগঞ্জের ১০ বছরের শিল্পা খাতুনও চতুর্থ শ্রেণির পর স্কুলে যায়নি। মা সাকিদা বিবি বলছেন, “বিড়ি বেঁধে সংসার চলে ঠিকই। কিন্তু মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে বিড়ি বাঁধবে আমি চাইনি কখনও। সে নিজেই স্কুল যাওয়া ছেড়েছিল। দু’দিন আগে এসে বলল স্কুলে ভর্তি হব। তাই এ দিন গিয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।”

রঘুনাথপুর হঠাৎপাড়ার সোহেল ও আবু কালাম পড়া ছেড়ে পাড়ার দাদাদের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করছিল। সোহেলের কথায়, ‘‘দৈনিক ২০০ টাকা করে মজুরি পেতাম। টাকা নিয়ে আসে মায়ের হাতে দিতাম। ওই কাজ করতে গিয়ে স্কুলে যাওয়া হয়নি। এখন নতুন করে পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করছে। সে কথা জানাতেই মা নিয়ে গিয়ে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।”

ওই কিশোর-কিশোরীদের স্কুলে ফেরানোর পিছনে কৃতিত্ব গ্রামে গড়ে ওঠা শিশু সংসদের। তার সদস্য সাহানারা খাতুন বলছেন, “স্কুল ছাড়ার পিছনে পরিবারের অর্থনৈতিক কারণ অনেকটাই দায়ী। ছেলেমেয়েরা আয় করছে দেখে ওদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছিল না। ওদের বোঝাতে পেরেছি কেন স্কুলে যাওয়া জরুরি। তাই শেষ পর্যন্ত স্কুলে ফেরানো গিয়েছে তাদের।” বয়স বেড়ে যাওয়াই পঠন পাঠনে দুর্বল এদের কয়েকজন। সেই দুর্বলতা কাটাতে ওদের আলাদা ভাবে কোচিং দেওয়া হবে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বিপ্লব দাস।

School Education Children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy