Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মাধ্যমিক দিতে যাওয়ার আগে ওদের প্রথম পরীক্ষা বিএসএফ চৌকিতে

যেমন তারা চেনে, বর্ষায় চর-ভাসি দিনযাপন, দুর্মূল্য কেরোসিনের আলোয় পঠনপাঠন আর মাইলের পর মাইল হেঁটে একটা নৌকোর অন্বেষণ।

চর-ভেঙে: লালগোলার নির্মলচরে। নিজস্ব চিত্র

চর-ভেঙে: লালগোলার নির্মলচরে। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

মাঝখানে একটা রুপোলি নদী, সম্বৎসর টলটলে জল নিয়ে উথালপাতাল করে। আর আছে জ্যৈষ্ঠের রোদ্দুরে পুড়ে খাক হয়ে থাকা একটা বালিয়াড়ি। এ তাদের বড় চেনা দিন গুজরানের পথ।

যেমন তারা চেনে, বর্ষায় চর-ভাসি দিনযাপন, দুর্মূল্য কেরোসিনের আলোয় পঠনপাঠন আর মাইলের পর মাইল হেঁটে একটা নৌকোর অন্বেষণ।

এ বার যেমন, ঘাটের কিনারে দাঁডিয়ে মাটিতে ক্রমাগত পা ঘষে যাচ্ছিল তিনটি মেয়ে। কেন রে?

টেনশন হচ্ছে না, কোথায় সেন্টার পড়েছে জানেন! নদী পার হতেই পঁয়তাল্লিশ মিনিট। অথচ ঘাটে নাও কোথায়!

নির্মল চরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওরা। যুদ্ধ ওদের কাছে খুব সহজ চেনা এক শব্দ। জল-বালি ভেঙে নৌকার খোঁজ করে সেন্টারতক পৌঁছে সময়ে পরীক্ষা দিতে পারবে তো? এ বারের ১৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কাছে, ফি বৎসরের চেনা প্রশ্নটা ফের এ বার ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।

নির্মলচর থেকে ইসলামপুর থানার চরদৌলতপুর স্কুলে রোজকার পড়াশোনা সেরে এ বার ১৪ জন চলেছে মাধ্যমিক দিতে। তাদের সিট পড়েছে রানিনগরের রাখালদাসপুর হাইস্কুলে। সেখানে তাদের জন্য পরীক্ষা অন্তে আর পাঁচ জনের মতো বাপ মায়েরা ডাব-ফলের রস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন না। বরং পরীক্ষা দিয়েই তাদের ছুটতে হবে, চরের পথে। নৌকা ছেড়ে গেলে দীর্ঘ অপেক্ষা।

পদ্মা পাড়ে দাঁড়িয়ে কাঞ্চন মণ্ডল বলছে, ‘‘চরে নেমে সাত কিলোমিটার হাঁটতে হবে। এখন খোশ গল্প করলে চলে!’’ পদ্মার ভাঙনে ভাঙা গড়া নিয়েই গত পঁচিশ বছর ধরে জেগে রয়েছে নির্মলচর। এখনও চরের গ্রামে নেই রাস্তা, বিদ্যুৎ বা স্কুল। ফলে ওই চরের বড় একটা অংশের ছাত্র ছাত্রীকে ভগবানগোলা এলাকার ওই চর থেকে লেখাপড়া করতে আসতে হয় ইসলামপুরের চরদৌলতপুর হাইস্কুলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার দাস বলেন, ‘‘টানা ৭ কিমি আলপথ, তার মাঝে কোথাও আবার হাঁটুজল বা কাদা। সেটা পেরিয়ে আমার শতাধিক ছাত্র ছাত্রীকে স্কুলে আসতে হয়। বর্ষায় কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও ভাল লাগে ছাত্ররা নৌকা চেপে আসতে পারে ভেবে। ওই এলাকার ১৪ জন এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে আমার স্কুল থেকে। এটা আমার কাছে প্রাপ্তি।’’

শুধু নির্মলচর নয়, জলঙ্গির চর পরাশপুর বা উদয়নগরখণ্ড চর থেকেও একই ভাবে হিরা খাতুন সামাদ মণ্ডলদের পরীক্ষা দিতে যেতে হবে চরের পথ পেরিয়ে জলঙ্গিতে। চর পরাশপুরের হিরা খাতুনের কথায়, ‘‘আমাদের পড়াশোনা চালানোর নাম, লড়াই! মাধ্যমিক দেওয়ার আগে, যাতায়াতের পথে আরও দু’বার পরীক্ষা দিতে হয়, বিএসএফের জওয়ানদের চৌকিতে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Island BSF Camp Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE