Advertisement
E-Paper

সামনে বই, মাথার উপরে আকাশ

কোথাও বারান্দা সম্বল, কোথাও কৃষ্ণচূড়ার আড়াল। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা রোদজলের মর্জি মেনে বইখাতা-চাটাই নিয়ে ছোটাছুটি।এরই নাম নাকি স্কুল!বছর আড়াই আগে এক রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল রামচন্দ্রপুর নতুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪টি ক্লাসঘরের ছাদ।

কল্লোল প্রামাণিক ও অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৪
স্কুল চত্বরেই বসেছে স্কুল।নিজস্ব চিত্র

স্কুল চত্বরেই বসেছে স্কুল।নিজস্ব চিত্র

কোথাও বারান্দা সম্বল, কোথাও কৃষ্ণচূড়ার আড়াল। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা রোদজলের মর্জি মেনে বইখাতা-চাটাই নিয়ে ছোটাছুটি।

এরই নাম নাকি স্কুল!

বছর আড়াই আগে এক রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল রামচন্দ্রপুর নতুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪টি ক্লাসঘরের ছাদ। দাঁড়িয়ে রয়েছে চার দিকের দেওয়াল। অনেক বছর আগে যা কি না বালি-সিমেন্টের বদলে কাদা দিয়ে গাঁথা হয়েছিল। ভিতও অগভীর।

কিন্তু কী আর করা? গুড়া-পাশলা পঞ্চায়েতের ওই নড়বড়ে স্কুলঘরেই প্রাণ হাতে করে ক্লাস করছে পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আতাউজ্জামান জানান, গত আড়াই বছরে বেশ কয়েক বার সর্বশিক্ষা মিশনে আবেদন জানিয়েও টাকা পাননি।

গুড়া-পাশলা পঞ্চায়েতের আয়রা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেরও প্রায় একই দশা। ২০১৫ সালের জুন ছুটির মিনিট পাঁচেক পরে বাজ পড়ে ফুটিফাটা হয়ে গিয়েছিল স্কুলবাড়ি। বছর দেড়েক ধরে ক্লাস তলছে মোটে ফুট চারেক চওড়া বারান্দায়। বৃষ্টির ছাঁটে পড়ুয়ারা ভিজে যাওয়ায় বর্ষার সময় অধিকাংশ দিনই স্কুলে ছুটি দিয়ে দিতে হয়। স্কুলটির আরও এক সমস্যা হল লাগোয়া ১২-১৪ বিঘার বিশাল পুকুর। কোনও পাঁচিল নেই। প্রধান শিক্ষক পুলকেশ দে বলেন, ‘‘বছর দেড়েক আগে তৃতীয় বছরের এক ছাত্র আকাশ ডুবে যায়। সে বাঁচলেও তার আগের বছর একটি ছেলে ডুবে মারা গিয়েছিল।’’ তাঁরাও মেরামতি ও পাঁচিলের টাকার জন্য সর্বশিক্ষা মিশনে হত্যে দিয়ে বসে আছেন।

করিমপুরের মুরুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও কহতব্য নয়। ক্লাসঘর নেই, পড়ুয়াদের ঠাঁই হয়েছে মুরুটিয়া-বালিয়াডাঙা রাস্তার পাশে। ১৯৪০ সালে তিনটি পাকা ঘর নিয়ে শুরু হয়েছিল স্কুল। পরে সংস্কারের অভাবে ঘরগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ছাদের অবস্থা বিপজ্জনক। শিক্ষকেরা আর ঝুঁকি নেন না। বারো বছর থেকে স্কুলের সামনে কৃষ্ণচুড়া গাছের নীচে চলছে পাঁচটি ক্লাস। চড়া রোদ হলে বা আকাশে মেঘ দেখলেই বই নিয়ে বাড়ি পালায় পড়ুয়ারা।

স্কুলটি পড়ুয়ার সংখ্যা এখন ১৪৭। শিক্ষক সাত জন। শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি অবধি পাঁচটি ক্লাসের পড়ুয়ারা একটি গাছের নীচে গাদাগাদি করে বসে। মিড-ডে মিল রান্না থেকে খাওয়া সবই আকাশের নীচে। গাড়ির চাকায় লেগে পাশের রাস্তা থেকে পাথর ছুটে আসে প্রায়ই। ধুলোবালি তো আছেই। বছর দুই আগে এক বার খবরের কাগজে লেখালেখি হলে কর্তারা খোঁজখবর নিয়েছিলেন। তার পর যে-কে-সেই। করিমপুর ২-এর বিডিও সত্যজিৎ কুমার অবশ্য দাবি করেন, “আমি বিষয়টা জানতাম না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” মুর্শিদাবাদে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিক তানিয়া পারভিন অবশ্য মেনে নেন, ‘‘গুড়া-পাশলার ওই দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আমাদের জানা আছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘রাজ্য থেকে অল্প দিনের মধ্যেই টাকা মিলবে। তখন ওই দু’টি স্কুলের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে।’’

School Students Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy