Advertisement
E-Paper

আমাদেরও পিকনিক, আপ্লুত ইটভাটা

আজ যে পিকনিক। শুক্রবার ছুটির দিন। সকাল থেকেই তাই সাজ সাজ রব। স্নান সেরে বোঁচকা ঘেটে সবথেকে ভাল পোশাক পরে,  সকলেই চলে এসেছিলেন ভাটার সামনে। সঙ্গে ঢোল। এসেছিলেন স্থানীয় একটি সংস্থার সদস্যেরা। সবাই মিলে দিনভর হইহই।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
প্রথম পিকনিকে। শুক্রবার চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

প্রথম পিকনিকে। শুক্রবার চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

রাতেই বোঁচকা থেকে মায়ের লাল রঙের শাড়িটা বের করে রেখেছিল বছর পনেরোর কাজল। সস্তার জরির পাড়ের সিল্কের শাড়ি। আঁচলের দিকটা আবার খোঁচা লেগে ছেঁড়া। কাজলের কোলে বছর তিনেকের বোন ধনু। কনকনে শীতে তার গায়ে শুধুই একটা জামা। সে হোক। আজ যে পিকনিক।

প্রায় জোর করেই কাজলকে নাচের দলে নিয়ে যায় সকলে। বোনের হাত ধরে সে নাচতে শুরু করে। ও দিকে তখন বিরাট কড়াইয়ে ফুটছে মুরগির মাংস। হঠাৎ ডাক পড়ে, ‘‘কই গো সব, খাবার তৈরি। চলে এসো।” সে কথা যেন কারও কানেই যায় না। নাচ-গান চলতে থাকে। বহু ডাকাডাকির পরে কেউ কেউ খেতে গেলেন। বাকিরা তখনও নেচে যাচ্ছে লোকগানের বোলে। ভিড়ের মধ্যেই বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে বছর পঞ্চাশের ভুটেশ্বর বলছে, ‘‘বড় ভাল লাগছে গো। আজই প্রথম পিকনিক কি না!’’

চাপড়ার ন’মাইলের ইটভাটা। চার দিকে ডাঁই করে রাখা কাঁচা-পাকা ইট। কোথাও মাটির স্তুপ, কোথাও আবার কয়লা। তারই এক পাশে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে কাজ করতে আসা কুলি-কামিনদের অন্ধকার ঘুপচি ঘর। সেখানেই যেন আজ আলোর রোশনাই। তবে সেটা কেরোসিন বা বিজলির নয়, সে আলো মনের। আজ যে পিকনিক। শুক্রবার ছুটির দিন। সকাল থেকেই তাই সাজ সাজ রব। স্নান সেরে বোঁচকা ঘেটে সবথেকে ভাল পোশাক পরে, সকলেই চলে এসেছিলেন ভাটার সামনে। সঙ্গে ঢোল। এসেছিলেন স্থানীয় একটি সংস্থার সদস্যেরা। সবাই মিলে দিনভর হইহই। শ্যামলী ওঝা বলছেন, ‘‘কত্ত দিন পরে এমন একটা দিন কাটালাম! আমাদের তো দু’মুঠো খাবারই জোটে না। আমরা কী করে পিকনিক করব? ওই সংস্থার লোকজন আয়োজন করল বলেই না এমন আনন্দের সঙ্গে একটা দিন কাটালাম! জীবনে প্রথম পিকনিক তো। তাই সক্কলে আহ্লাদে আটখানা।’’

ন’মাইলে গোটা তিনেক ইটভাটা। দিন কয়েক আগে সংস্থার সদস্যরা এসে ভাটার কর্মীদের সংখ্যা গুনে গিয়েছিলেন। আর প্রতিটা পরিবারের সব সদস্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন কুপন। তাঁরা বলে গিয়েছিলেন, ‘‘শুক্রবার তোমরা রান্না করবে না। ওই দিন পিকনিক।”

শুক্রবার সেই পিকনিকেরই আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় চারশো জনের ব্যবস্থা। ভাত, ডাল, পালং শাকের তরকারি, মুরগির মাংস, চাটনি আর রসগোল্লা। পরিবেশন করছেন সংস্থার সদস্যেরাই। তারই ফাঁকে ব্যস্ত ভাবে তদারকি করতে করতে সম্পাদক দেবদুলাল বিশ্বাস হাঁক দেন, ‘‘ওরে কে আছিস, পাত যে ফাঁকা। আরও চাট্টি মিষ্টি নিয়ে আয় দেখি।’’

একটি ইটভাটার মালিক কমল কুণ্ডু বলেন, “জানেন, ওঁদের এত আনন্দ পেতে কোনও দিন দেখিনি। টাকা পেলেই ওঁদের কেউ কেউ নেশা করেন। কিন্তু আজ দেখুন, কোনও নেশা না করে কেমন সারাটা দিন হেসে-নেচে-গেয়ে কাটিয়ে দিলেন!”

সংস্থার অনেকেই এ বছর নিজেরা বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক না করে সেই টাকা তুলে দিয়েছেন দেবদুলালের হাতে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলে তা আরও বেড়ে যায়।’’

Picnic Brick Field
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy