Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নালিশে অস্বস্তিতে বিজেপি

ভোটার লিস্টে হাজির নেতার বাংলাদেশি স্ত্রী

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বলরাম মাঝির অভিযোগ, অঞ্জন মেরেকেটে মাস তিনেক আগে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০১:৪৫
Share: Save:

আইন ভেঙে এক বিজেপি নেতার বাংলাদেশি স্ত্রীর নাম কল্যাণীর ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।

অভিযুক্ত নেতা, কল্যাণী শহর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন সিকদার কল্যাণীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঘোষপাড়া স্টেশন চত্বরের বি-১৬/১৫ ঠিকানায় তাঁর বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, অঞ্জন এক সময়ে বাম ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় ভাবে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। বিজেপির কল্যাণী শহর মণ্ডল সভাপতি বিশ্বরূপ কুলভি বলেন, ‘‘অঞ্জন আমাদের শহর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক।’’

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বলরাম মাঝির অভিযোগ, অঞ্জন মেরেকেটে মাস তিনেক আগে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পরে তিনি একাই এ দেশে ফিরে আসেন। তার পর থেকে একাই ঘোষপাড়া এলাকায় থাকছিলেন। দিন কয়েক আগে শোনা যায়, অঞ্জন ফের বাংলাদেশে বেড়াতে চলে গিয়েছেন। এর পরেই সদ্য প্রকাশিত ভোটার তালিকায় দেখা যায়, বৃষ্টি সিকদার বলে এক জনের নাম রয়েছে। ঠিকানা হিসেবে অঞ্জনের বাড়ির নম্বর লেখা, স্বামী হিসেবে অঞ্জনের নাম রয়েছে।

শুক্রবার দিলীপ ভাণ্ডারী নামে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা কল্যাণী মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান। শহর তৃণমূল সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি লাফালাফি করছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দাকে নাগরিকত্ব দেওয়াকি আইনসিদ্ধ? আমিও মহকুমাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

এই নিয়ে বিজেপির অস্বস্তি বোঝা যায় বিশ্বরূপের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানার পরেই অঞ্জনের বাড়িতে যোগাযোগ করি। উনি এখন বাংলাদেশে রয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে ওঁর এক ভাগ্নে। সে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি।’’ অঞ্জনের সেই ভাগ্নে স্কুলপড়ুয়া। শনিবার সে বলে, ‘‘মামা বাংলাদেশে গিয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে মামার বিয়ে হয়। কিন্তু মামি ঘোষপাড়ার বাড়িতে কখনও আসেনি। খালি মামার ফোনে দেখেছি। মামা বলেছে, সময় হলেই নিয়ে আসবে।’’ মামির বাড়ি ঠিক কোথায়, তা অবশ্য সে জানায়নি। অঞ্জনের প্রতিবেশী বাপি দাস বলেন, ‘‘আমি শুনেছি যে অঞ্জন বাংলাদেশে বিয়ে করেছে। কিন্তু ওর স্ত্রীকে কখনও পাড়ায় দেখিনি। তবে আমি অশিক্ষিত মানুষ, কী ভাবে ভোটার তালিকায় তার নাম উঠেছে, সে সব কিছু বলতে পারব না।’’

প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই ভোটার তালিকায় কারও নাম উঠতে পারে না। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, জন্মসূত্রে বা রক্তের সম্পর্কের সূত্রে, আইনি রেজিস্ট্রি করে, দেশীকরণের মাধ্যমে বা কোনও ভূখণ্ডের ভারতভুক্তির মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করা যেতে পারে। ভিন্‌দেশি কোনও মহিলা বা পুরুষ ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করলে তাঁকে রেজিস্ট্রি করে নাগরিক হতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ১৯৮৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অনুযায়ী এ দেশে পাঁচ বছর থাকতে হবে। তার পরে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে নাগরিকত্ব পেতে হবে। তখনই তাঁর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

তৃণমূলের অরূপ বলেন, ‘‘বাইরের কোনও বিধানসভা কেন্দ্রের কাউকে কল্যাণী বিধানসভার ভোটার হতে গেলেও তো এখানে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ছয় মাস থাকতে হবে। অঞ্জনের স্ত্রীকে কোনও দিন এলাকায় দেখা না যাওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি এই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার হলেন, সেটাই আসল প্রশ্ন।’’ কাউন্সিলর বলরাম বলছেন, ‘‘বিজেপি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করিয়েছে। তাতে কোথাও বলা হয়নি যে বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা সে দেশে বসেই ভারতের ভোটার হয়ে যাবেন। এর বিহিত করা দরকার।’’

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশে অত্যাচারিত হয়ে ওই হিন্দু মেয়েটি এ দেশে কোথাও এসে ছিল। দীর্ঘদিন থাকার কারণে নিয়ম মেনেই তার নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে।’’

ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গেলে নির্দিষ্ট কিছু নথি জমা দিতে হয়, যা এ দেশের নাগরিক ছাড়া কারও পক্ষে জমা দেওয়া সম্ভব নয়। কোন নথির ভিত্তিতে বৃষ্টি সিকদারের নাম ভোটার তালিকায় উঠল? শনিবার কল্যাণীর মহকুমাশাসক ধীমান বারুই বলেন, ‘‘সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত হবে। তার রিপোর্ট পেলে পদক্ষেপ করব।’’

অঞ্জনের সঙ্গে কোনও ভাবেই ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Voter List BJP Kalyani Bangladeshi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE